উপজেলা ভোট: এমপিদের সামাল দিতেই নাকাল ইসি

চার ধাপে প্রায় সাড়ে চারশ উপজেলার ভোট শেষ হচ্ছে রোববার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2019, 08:25 PM
Updated : 30 March 2019, 08:25 PM

চতুর্থ ধাপে এদিন সকাল ৮টা থেকে দেশের ২২ জেলার ১০৭টি উপজেলায় ভোট শুরু হয়েছে একটানা চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।

বিএনপি ও তাদের জোটের বর্জনের মধ্যে এবারের স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তাদের বিদ্রোহীদের মধ্যে।

চার ধাপের ভোটে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সাংসদদের শুধু এলাকা ছাড়ার নোটিশ দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। জেল-জরিমানার বিধান থাকলেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

রোববারের ভোটের আগের দিনও ক্ষমতাসীন দলের তিনজন সাংসদকে দ্রুত এলাকা ছাড়ার জন্য বলা হয়েছে।

ইসির উপ সচিব মো. আতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ময়মনসিংহ-৯ আসনের আনোয়ারুল আবেদীন খান, যশোর-৪ আসনের রণজিত কুমার রায় ও নোয়াখালী-৪ আসনের মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এই ধাপে এর আগে টাঙ্গাইল-৪, ৫, ৮, বাগেরহাট-৪, খুলনার-৬, ময়মনসিংহ-১১ ও যশোর-২ এর আসনের সংসদ সদস্যদেরও নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছিল।

চার ধাপে সব মিলিয়ে অন্তত দুই ডজন এমপিকে এ ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে একজন মন্ত্রীর এপিএসের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে স্থানীয় নির্বাচনে এলাকায় অবস্থান, প্রচারে অংশ নেওয়া ও সরকারি সুবিধা নিয়ে প্রচারে অংশ নেয়া নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে এমপিদের সহায়তা চেয়ে বিষয়টি অবহিত করে ভোটের শুরুতেই স্পিকারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

তারপরেও আরও অনেক সাংসদদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ আসে। এরমধ্যে মাত্র অন্তত ২৪ জনকে সতর্ক করে ইসি।

আরও যাদের সতর্ক করা হয়

টাঙ্গাইল-৮ এর মো. জোয়াহেরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল-৫ এর মো. ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৪ এর মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান, খুলনা-৬ এর মো. আক্তারুজ্জামান, বাগেরহাট-৪ এর মো. মোজাম্মেল হোসেন, ময়মনসিংহ-১১ এর কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ও যশোর-২ এর মো. নাসির উদ্দিন; নড়াইল-১ আসনের বি এম কবিরুল হক মুক্তি, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মো. আফজাল হোসেন, রাজবাড়ী-২ আসনের মো. জিল্লুল হাকিম, গাইবান্ধা-৫ আসনের সাংসদ ফজলে রাব্বি মিয়া, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেন গুপ্ত, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এম এ মতিন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের মো. আবু জাহির, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোণা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল।

১০ মার্চ থেকে উপজেলা ভোট শুরু হয়। ইতোমধ্যে তিন ধাপ শেষ হয়েছে। রোববার চতুর্থ ধাপ ও বাকি উপজেলাগুলোয় ১৮ জুন পঞ্চম ধাপের ভোট হবে।

পুলিশ-প্রশাসনের ওপর কড়া নজরদারি

সাংসদদের নিয়ে হিমশিম খেলেও পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর ইসির ছিল কড়া নজরদারি।

সহিংসতা রোধে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশ সুপার-ওসিকে প্রত্যাহার, অনিয়মের কারণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-ওসিকে বরখাস্ত;  অন্তত এক ডজনেরও ইউএনও এবং ওসিকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রত্যাহার-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ইসি। ভোটও স্থগিত করা হয়েছে।

চার ধাপে ভোটের দিন বড় ধরনের সহিংসতা না ঘটলেও ভোট শেষে বাঘাইছড়ির ঘটনা ছিল এবার সবচেয়ে মর্মান্তিক।

রোববার ১০৭ উপজেলায় ভোট

চতুর্থ ধাপে ১২২ উপজেলায় ভোটের তফসিল ছিল। তৃতীয় থেকে চতুর্থ ধাপে আনা হয় ৬টি উপজেলার ভোটের তারিখ। সব মিলে এ ধাপে ১২৮টি ভোট হওয়ার কথা ছিল।

তবে আইনি জটিলায় ৪টি, ইসির নির্দেশনায় ২টিসহ মোট ৬টিতে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে। এছাড়া ১৫টি উপজেলায় সব পদে সবাই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে রোববার ভোট হবে ১০৭ উপজেলায়।

ভোটের পরে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে সহিংস ঘটনার পরে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কঠোর অবস্থান রয়েছে  ইসির। এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮ উপজেলায় ১১১ প্লাটুন অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে, রিজার্ভ রাখা হয়েছে ৪৮ প্লাটুন। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় র‌্যাবের অতিরিক্ত ৪টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে।

এই ধাপে ছয়টি সদর উপজেলায় ইভিএমে ভোট নেওয়া হচ্ছে, দ্রুত ফলাফল পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হবে ট্যাব।

উপজেলা ছয়টি উপজেলা হলো- বাগেরহাট সদর (কেন্দ্রসংখ্যা ৯১), ফেনী সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১২৭), মুন্সীগঞ্জ সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১১৬), ময়মনসিংহ সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১০০) ও পটুয়াখালী সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ৮৯)।

ভোট তথ্য

>> ২৫ জেলার ১০৭টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে চতুর্থ ধাপে।

>> বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৯০ জন। তাদের মধ্যে ৩৯ জন চেয়ারম্যান, ২২ জন ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২৭ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।

>> চেয়ারম্যান পদে ৩৫১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৩৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪০৬ জন ভোটের লড়াইয়ে আছেন।

>>১০৭ উপজেলার ৯ হাজার ৭৪০টি কেন্দ্রে ভোটার আছেন ২ কোটি ১৫৫ লাখ ৪০ হাজার ৭০৪ জন।

>> ১২২ উপজেলায় ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী ধাপে স্থানান্তর, আদালতের আদেশে স্থগিত ১৫ উপজেলা বাদ পড়েছে।

>> বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় ১৫ উপজেলায় ভোটের দরকার পড়ছে না।

>> বাগেরহাট সদর (কেন্দ্রসংখ্যা ৯১), ফেনী সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১২৭), মুন্সীগঞ্জ সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১১৬), ময়মনসিংহ সদর (কেন্দ্র সংখ্যা ১০০) ও পটুয়াখালী সদরে (কেন্দ্র সংখ্যা ৮৯)  ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হচ্ছে।

এবার উপজেলার ভোট হচ্ছে পাঁচ ধাপে।

দলীয় প্রতীকে এই প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলের বর্জনের কারণে ভোটে লড়াইয়ের আমেজ দেখা যায়নি।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৪৩ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৪১ শতাংশ ও তৃতীয় ধাপে ৪১ শতাংশ ভোট পড়ে।