ফায়ার ব্রিগেডের হিসাবে বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশের হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২৫। তাদের মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে, ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে; শ্রীলঙ্কার এক নাগরিকসহ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বাঁচার চেষ্টায় লাফিয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় আরও ৭৬ জন আহত হয়েছেন বা ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেছেন, শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে তল্লাশি চালাবেন তাদের কর্মীরা। পরে ভবনটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
মেয়র আতিক সাংবাদিকদের বলেছেন, সুউচ্চ ভবনটি গড়তে ইমারত বিধি মানা হয়নি বলে তার মনে হয়েছে। সেখানে অগ্নি নির্বাপণের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালযয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ফারুক নামের এক ব্যক্তির জমিতে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রূপায়নের নির্মাণ করা ২২ তলা ভবনটি সংক্ষেপে এফআর টাওয়ার নামেই পরিচিত। এক দশক আগেও সেখানে একবার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল।
এবারের অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে চারটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর। এর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে ওই ভবনের নকশা অনুমোদন এবং নির্মাণ কাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতাহতের এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। উদ্ধার তৎপরতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন।
মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি
এফ আর টাওয়ারে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে দুই রকম তথ্য এসেছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাছ থেকে।
পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সহকারী কমিশনার সুবীর রঞ্জন দাস রাত ১টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, থানা থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী ২৫ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে তার কাছে। তবে নিহতদের তালিকা তার হাতে নেই।
একই সময়ে ফায়ার ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, তারা ১৯ জনের মৃতদেহের তথ্য পেয়েছেন। তিনিও নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা জানাতে পারেননি।
আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন এবং ইউনাইটেড হাসপাতারে একজন এবং অ্যাপোলো হাসপাতালে একজনের মৃতদেহ থাকার কথা জানায় পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিকালে ঘটনাস্থলে খোলা ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণের বোর্ডে দেওয়া তথ্যে জানানো হয়, নিহত মোট ১৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে দুইজন, কুর্মিটোলায় একজন এবং ইউনাইটেডে তিনজন মারা গেছেন। বাকি ১৩ জনের লাশ এফআর টাওয়ার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিকী রাত ১১টার দিকে জানান, একজন নির্বাহী ম্যাজিট্রেটের উপস্থিতিতে ইউনাইটেড হাসপাতালে থাকা তিনজনের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অ্যাপোলো হাসপাতালে থাকা একজনের মৃতদেহও স্বজনের আবেদনের ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা জানান ভাটারা থানার ওসি কামরুজ্জামান।
রাত সোয়া ১১টার দিকে গুলশান পুলিশের উপ কমিশনার মোশতাক আহমেদ জানান, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ হয়েছে।
ওই সময় এফ আর ভবনে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বোর্ডেও নিহতের সংখ্যা ২৫ দেখানো হয়। ওই হিসাবে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার লাশের সংখ্যা ১৯ দেখানো হয়।
কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর বোর্ডের তথ্য সংশোধন করে মৃতের সংখ্যা আবার ১৯ জনে নামিয়ে আনা হয়।
এর কারণ জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি পরে আসায় বিস্তারিত বলতে পারছেন না। ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যাবে।
রাত ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত অপারেটর জানান, ঢাকা মেডিকেলে নয় জন, কুর্মিটোলায় সাতজন এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজনের লাশ থাকার হিসাব আছে তাদের হাতে। আর এটাই সর্বশেষ হিসাব।
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ওই বাণিজ্যিক ভবনের সবগুলো ফ্লোরেই দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস। সপ্তাহের শেষ দিন দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকের আগে আগে সব অফিসেই তখন দারুণ ব্যস্ততা।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন জানান, বেলা ১২টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে তাদের ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে। পরে আরও আইটি ইউনিট তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।
আগুনের ভয়াবহতা বেড়ে গেলে ডেকে আনা হয় হেলিকপ্টার। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উদ্ধারকারীরাও উদ্ধার কাজে যোগ দেন।
চার ঘণ্টা চেষ্টার পর বিকাল পৌনে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তবে তখনও কয়েকটি ফ্লোর থেকে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছিল, ধোঁয়া বের হচ্ছিল ভবনের বিভিন্ন অংশ থেকে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের রাতে জানান, তাদের ১০/১২টি দল ভেতরে ডাম্পিং ও তল্লাশির কাজ করছে। ভেতরে আর আগুন নেই।
অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে ফেরা কেউ কেউ বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুন লাগার ধারণা দিলেও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন অনুমাননির্ভর কিছু বলতে চাননি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। “আমি কোনো ধারণা করছি না, তদন্ত কমিটির ওপর ছেড়ে দিয়েছি।"
অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অষ্টম থেকে দশম তলা। ওই তিনটি ফ্লোরে বিভিন্ন অফিসে সোফাসহ আসবাবপত্র থাকায় প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। তাতে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন।
জীবন বাজির লাফ
মো. গিয়াস উদ্দিন নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওই ভবনের সপ্তম বা অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর তা উপরের দিকে ছড়াতে থাকে। আতঙ্কে বিভিন্ন ফ্লোরে শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি, তাতে বেশ কয়েকজন আহতও হন।
ততক্ষণে ভবনের সামনে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতার ভিড় জমে যায়। টেলিভিশনগুলো ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে। দূর থেকেও বনানী এলাকার আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার পর উপরের ফ্লোর জ্বলতে দেখা যায়। সেখানে পানি ছিটানোয় আগুন কমে এলে আবার সপ্তম ও অষ্টম তলায় আগুনের শিখা দেখা যায়।
এদিকে উপরের ফ্লোরগুলোর অনেকে বাঁচার আশায় ছাদে উঠে যান। ১২ তলায় কাচ ভেঙে বেশ কয়েকজনকে হাত নেড়ে উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা যায়।
বাঁচার মরিয়া চেষ্টায় বিভিন্ন ফ্লোর থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত বা নিহত হন বেশ কয়েকজন। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা জনতা আর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা চিৎকার করে নিষেধ করেও তাদের থামাতে পারেননি।
এভাবেই লাফিয়ে পড়ে প্রাণ যায় শ্রীলঙ্কার নাগরিক নিরস ভিগনারাজার, যিনি কার্গো পরিবহন কোম্পানি স্ক্যানওয়েল লজিস্টিকে কাজ করতেন। এফআর টাওয়ারের ১১ তলায় স্ক্যানওয়াল লজিস্টিক লিমিটেডের কার্যালয়।
মিজান নামের একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, এফআর টাওয়ারের নিচতলা থেকে তিন তলা খাবার, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান এবং একটি মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে। তৃতীয় থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত রেস্তোরাঁ আর একটি কনভেনশন সেন্টার।
এরপর নবম তলা থেকে উপরের ফ্লোরগুলোতে বিভিন্ন বায়িং হাউস ও ট্র্যাভেল এজেন্সি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস। তার মধ্যে উই মোবাইল ও আমরা নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার লিংক থ্রির অফিসও রয়েছে।
ঠিক কতগুলো প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ওই ভবনে ছিল তা জানা না গেলেও সব মিলিয়ে ওই ভবনে এক হাজারের বেশি মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করত বলে নিরাপত্তাকর্মী মিজানের ধারণা।
অগ্নিকাণ্ডের সূচনার ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে যাওয়ার পর সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর উদ্ধারকর্মীরাও অভিযানে যোগ দেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবীরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় নামেন। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অ্যাম্বুলেন্স আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয়।
হেলিকপ্টার থেকেও ওই ভবনের ওপর পানি ছিটাতে দেখা যায়। আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান জানান, সামরিক বাহিনীর পাঁচ হেলিকপ্টার এ কাজে অংশ নেয়।
বেলা ৩টার দিকে আগুনের তীব্রতা কমে আসার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মই লাগিয়ে উপরের ফ্লোরগুলোতে আটকা পড়া মানুষকে নামিয়ে আনতে শুরু করেন। তখনও অষ্টম তলায় দেখা যাচ্ছিল আগুনের শিখা।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা সেইসব দৃশ্যে ভাঙা কাচের ওপারে দাঁড়ানো অনেককে সাহায্যের আকুতি জানাতে দেখা যায়।
আগুনের খবর পেয়ে বনানীতে ছুটে আসেন ওই ভবনে আটকরা পড়াদের স্বজনরা। তাদের অনেকে সড়কে দাঁড়িয়ে আহাজারি করতে থাকেন। কেউ কেউ দৌঁড়ে ওই ভবনে ঢুকে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।
ভবনের সামনে উৎকণ্ঠিত ভিড়ের মধ্যে মহিউদ্দিন নামের একজন জানান, তার ভাই মোতাহার এফআর টাওয়ারের ১৪ তলায় একটি বায়িং হাউজে কাজ করেন। বেশ কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে তিনি ভেতরে আটকা পড়েছেন। ফোনে ভাইয়ের সঙ্গে তার কথাও হয়েছে।
কাফরুল থেকে আসা তিথি নামের এক তরুণী জানান, তার খালাতো বোন তানজিলা মৌলি এফআর টাওয়ারের দশম তলার ট্র্যাভেল এজেন্সি হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেসে কাজ করেন। আগুন লাগার পরপরই বাসায় ফোন করে আকা পড়ার কথা জানান মৌলি। কিন্তু বনানীতে আসার পর তারা আর যোগাযোগ করতে পারছেন না।
পরে রাত ১০টার দিকে তিথির স্বামী রানা জানান, মৌলি মারা গেছেন। কুর্মিটোলা হাসপাতালে তার মৃতদেহ তারা শনাক্ত করেছেন।
“আমি দেখেছি ভেতরে অনেকে আটকা পড়ে আছে। কাচ ভাঙতে না পারায় তারা বের হওয়ার চেষ্টাও করতে পারছে না। ধোঁয়ার কারণে অনেকে অচেতন হয়ে গেছে।”
সাবেক সেনা সদস্য মো. ইসমাইল হোসেন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন এফ আর টাওয়ারে। ভবনটির দশম ও ১১ তলা তিনি ঘুরে দেখেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "আমি সেখানে বেশ কয়েকজনকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখিছি। তাদের একজনকে আমি দড়ি দিয়ে বেধে টেনে জানালার কাছে এনে বের করেছি। তখনও তার প্রাণ ছিল। আরো ভেতরে যাওয়ার মত পরিস্থিতি সে সময় ছিল না।”
ভবনের সামনে জড়ো হওয়া জনতার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেরির কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বেশি। তবে ঘটনাস্থলে অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর কর্মীদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি দেখা যায়নি। মই দিয়ে কয়েক দফায় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষকে তারা ওই ভবন থেকে নামিয়ে আনেন।
তারা যখন মই নিয়ে কোনো ফ্লোরে ভাঙা কাচের কাছে পৌঁছাচ্ছিলেন, মইয়ে উঠেই তাদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন উদ্ধার পাওয়া মানুষগুলো। এ সময় উদ্ধারকর্মীরাও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি।
নিচে নামানোর পর অপেক্ষমাণ অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের দ্রুত বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিকাল পৌনে পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে বিভিন্ন ফ্লোরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক কর্নেল এসএম জুলফিকার রহমান সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, “শতাধিক মানুষকে আমরা রেসকিউ করেছি। ভেতরে কেউ আটকা থাকলে বা হতাহত থাকলে আমরা উদ্ধার করব। সেই সঙ্গে ডাম্পিংয়ের কাজও চলবে।”
লাফিয়ে পড়া এবং দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা কয়েক ডজন মানুষকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যুর খবর আসে বিকাল ৫টার আগেই। সন্ধ্যা ৬টার পর এফ আর ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে আরও মরদেহ নামিয়ে আনতে থাকেন উদ্ধারকর্মীরা।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে উদ্ধারকর্মীরা ল্যাডার দিয়ে বডিব্যাগে করে একজনের মরদেহ নামিয়ে আনার সময় নিহত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন বেজে ওঠে।
একজন ফায়ার সার্ভিসকর্মী ব্যাগের চেইন খুলে পকেট হাতড়ে মোবাইল ফোনটি খুঁজে বের করেন। তারপর ফোনের ওপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে স্বজনের মৃত্যুর খবর দেওয়ার কঠিন কাজটি তাকেই করতে হয়।
[প্রতিদেবনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ওবায়দুর মাসুম, তাবারুল হক, ফয়সাল আতিক, জয়ন্ত সাহা, মাহমুদ জামান অভী, আসিফ মাহমুদ অভী, আবদুল্লাহ আল মমীন, নুরুল ইসলাম হাসিব, কামাল তালুকদার ও লিটন হায়দার।]