কালরাতের স্মরণে এক মিনিট অন্ধকারে থাকবে দেশ

একাত্তরের পঁচিশে মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে সোমবার রাতে এক মিনিট অন্ধকারে থাকবে পুরো বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2019, 06:33 AM
Updated : 25 March 2019, 06:34 AM

‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ পালনে বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাত ৯টা থেকে ৯টা ১মিনিট পর্যন্ত চলবে এই প্রতীকী ‘ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি। জরুরি স্থাপনা ও চলমান যানবাহন ছাড়া সারাদেশে সব আলো এই এক মিনিট নেভানো থাকবে।

একাত্তরের ওই রাতে নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।

অবশ্য তার আগেই ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

কার্যত সেটাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, যার পথ ধরে কালরাতের পর শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব।

নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২৫ মার্চ গণহত্যার স্মৃতিচারণের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকছে গণহত্যার ওপর আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী।

সোমবার জোহরের নামাজের পর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সকল জেলা ও উপজেলায় করা হয়েছে আলোচনা সভা, গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকাণ্ড ছিল না। এটা ছিল ইতিহাসের কলঙ্কজনক এক গণহত্যার সূচনা মাত্র।

সেই রাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। ট্যাংক নামিয়ে হানাদার বাহিনী নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। ট্যাংক-মর্টারের গোলায়, আগুনের শিখায় সেই রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নয়জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে হানাদাররা।

সেই রাতের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে। রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও।

কালরাত্রির স্মরণে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া রাত ৯টার পর জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণে গণসমাধিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও শ্রদ্ধা নিবেদন হবে।