ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের ‘টাস্কফোর্স’

রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালানো শুরু করেছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2019, 12:57 PM
Updated : 24 March 2019, 04:36 PM

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, রোববার থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এক মাস এই টাস্কফোর্সের কার্যক্রম চলবে।

ডিএমপির চারটি ট্রাফিক বিভাগ থেকে একজন করে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বা একজন সহকারী কমিশন, দুজন পরিদর্শক, দুজন সার্জেন্ট, পাঁচজন কনস্টেবল নিয়ে গঠন করা হয়েছে এই বিশেষ টাস্কফোর্সের চারটি দল।

টাস্কফোর্সের অভিযানের প্রথম দিন ১৬১টি পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। ৮০টি গাড়ি রেকারিং ও ১১টি ডাম্পিংও করা হয়।

উপ-কমিশনার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ট্রাফিক উত্তর বিভাগ রাজধানীর কাকলী ক্রসিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১৯টি গণপরিবহন তল্লাশি করে ৪৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ও ৬টি গাড়ি রেকারিং করে।

ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০০টি গণপরিবহন তল্লাশি করে ২৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন, ৩৮টি গাড়ি রেকারিং ও ২টি গাড়ি ডাম্পিং করে।

ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ মানিক মিয়া, বছিলা ও টেকনিক্যাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৩৩টি গণপরিবহন তল্লাশি করে ৪২টি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন, ৭টি গাড়ি রেকারিং ও ৯টি গাড়ি ডাম্পিং করে।

ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ মৎস্য ভবন ও শাহবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০৮টি গণপরিবহন তল্লাশি করে ৪৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ও ২৯টি গাড়ি রেকারিং করে।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টাস্কফোর্সের অভিযান চলবে বলে ওবায়দুর রহমান জানান।

তিনি বলেন, প্রতিটি বিভাগের টাস্কফোর্স নিজেদের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালাবে। ফিটনেটবিহীন, রুট পারমিটহীন সব ধরনের গণপরিবহনের বিরুদ্ধে এই অভিযানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে বেপরোয়া চালনা, রাস্তায় আড়াআড়ি গাড়ি দাঁড় করিয়ে অন্য পরিবহনকে বাধা দেওয়া, যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী তোলা, দরজা খোলা রেখে বাস চালানোর মত ঘটনা ঘটলে টাস্কফোর্স ব্যবস্থা নেবে।”

লক্কর-ঝক্কর ও অতি পুরনো বাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি আইন লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওবায়দুর রহমান জানান।

গত বছর জুলাই মাসে ঢাকায় বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার বিক্ষোভে ফেটে পড়ে শিক্ষার্থীরা; নজিরবিহীন সেই আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে রাজধানী।

সড়কে পুলিশের দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা নিয়ে নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আইন না মানার চিত্র বেরিয়ে আসে সে সময়। পরে সরকারের তরফ থেকে সব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরানো হয়।

সাত মাস পর গত ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী বাসের চাপায় নিহত হলে আবারও ফুঁসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেন, “মেধাবী ছাত্র আবরারের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমরা রাস্তায় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারিনি।

“এই ব্যর্থতা আমাদের সবার। এর দায়ভার কেউ এড়াতে পারেন না। আমরা কেউ চাই না এরকম দুর্ঘটনা হোক। সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কাজ করলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা দেখতে হত না।”