তামাকপণ্যের ব্যবহার কমাতে চার প্রস্তাব

সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে দুইটি করা, বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দেওয়া, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের (জর্দা ও গুল) ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত এবং তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখলে ৩২০ কোটি মানুষ ধূমপান ছাড়তে উৎসাহী হবে বলে মনে করে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2019, 04:19 PM
Updated : 23 March 2019, 04:44 PM

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত প্রাক বাজেট সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধে এমন তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর মাহফুজ কবীর।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহায়তায় প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, বিটা, সুপ্র, এবং তাবিনাজ সম্মিলিতভাবে ‘কেমন তামাক কর চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং জাতীয় তামাক বিরোধী প্ল্যাটফর্মের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। 

বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ। প্রধান আলোচক ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সিটিএফকে গ্রান্টস ম্যানেজার এমএ সালাম, সিটিএফকের লিড কনসালটেন্ট শরীফুল আলম, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, আত্মার আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটনসহ তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “আমরা কয়েক বছর ধরেই তামাক পণ্যের কর কাঠামো পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছি, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকরাও এবিষয়ে একমত পোষণ করেন কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়না।”

এবারও একই দাবি জানিয়ে খলীকুজ্জামান বলেন, তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষায় বাজেটে কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।

বিশেষ অতিথি নাজনীন আহমেদ তামাক ব্যবাহারকারীদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

নাসির উদ্দিন আহমেদ তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্যকে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেন।  

সংবাদ সম্মেলনে সাতটি সুপারিশও দেওয়া হয়।

এগুলো হল- তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করা; বিভিন্ন তামাকপণ্য ও ব্রান্ডের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে তামাক ব্যবহারকারীর ব্রান্ড ও তামাকপণ্য পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত করা; সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে সরকারের করজালের আওতায় নিয়ে আসা; পর্যায়ক্রমে সকল তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে (শলাকা সংখ্যা এবং ওজন) প্যাকেট/কৌটায় বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ; একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছর মেয়াদি); সকল প্রকার ই-সিগারেট এবং হিটেড (আইকিউওএস) তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ; স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বৃদ্ধি (২%) করা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাব এবং সুপারিশগুলো কার্যকর হলে ধূমপায়ীরা ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহী হওয়ার পাশাপাশি সিগারেটের ব্যবহার ১৪ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ১২.৫ শতাংশে আসবে। বিড়ির ব্যবহার পাঁচ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৩.৪ শতাংশ হবে । আবার দীর্ঘমেয়াদে দশ লাখ ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। একই সাথে ছয় হাজার ৬৮০ কোটি থেকে ১১ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, সিগারেটের মূল্যস্তর বর্তমানে চারটি আছে। এরমধ্যে ৩৫ টাকা এবং ৪৮ টাকা এই দুইটি মূল্যস্তরকে একত্রিত করে একটি মূল্যস্তর (নিম্নস্তর) এবং ৭৫ টাকা ও ১০৫ টাকা মূল্যস্তরকে একত্রিত করে আরেকটি মূল্যস্তরে (উচ্চস্তর) নিয়ে আসা; নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১০৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং সকল ক্ষেত্রে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটে ৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

বিড়ির মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে শতকরা ৪৫ ভাগ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা  এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৮ টাকা নির্ধারণ করে শতকরা ৪৫ ভাগ সম্পূরক শুল্ক  এবং ৪.৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়।

ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বিলুপ্ত করে সিগারেট ও বিড়ির মতো ‘খুচরা মূল্যের’ ভিত্তিতে করারোপ করা; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৩৫ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; এবং প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার উপর ৫ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের উপর ৩ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করার পাশাপাশি সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য অব্যাহত রাখার প্রস্তাবও সংবাদ সম্মেলনে করা হয়।