এমপি মুক্তি এলাকায় থাকলে ভোট বন্ধ: হুমকি ইসির

ভোটের আগের দিন স্থানীয় সংসদ সদস্য বি এম কবিরুল হক মুক্তি এলাকায় অবস্থান করায় নড়াইলের কালিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 March 2019, 10:04 AM
Updated : 23 March 2019, 05:06 PM

কালিয়ায় পুনঃভোট করতে হলে তার ব্যয় সংসদ সদস্য মুক্তিকে বহন করতে হবে বলেও সতর্ক করে দেওয়া হয়।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে রোববার নড়াইলের কালিয়াসহ ১১৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে।

তার আগের দিন নড়াইল-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুক্তিকে এমন কড়া নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ করায় এর আগে সংসদ সদস্য মুক্তিকে সতর্ক করা হয়েছিল। এরপরও তিনি এলাকায় অবস্থান করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

“সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই শনিবারও সাংসদ এলাকায় অবস্থান করছে তথ্য পেলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং পরবর্তীকে ভোটের ব্যয়ভার তাকেই বহন করতে হবে।”

এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকেও জানানো হয়েছে বলে জানান ইসির যুগ্ম সচিব।

উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পাওয়ার পর এ পর্যন্ত ১৪ জন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নোটিস দিয়েছে ইসি। এরমধ্যে দুজনকে ভোট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি ও মন্ত্রীর একজন এপিএসের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

শুধু নোটিস দিয়ে দায় সারার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ বলেন, “যেখানে নির্দেশনা উপক্ষো করা হচ্ছে সেখানে ভোট বন্ধ করার মতো কঠোর সিদ্ধান্তও নিচ্ছে ইসি।”

এমপি কবিরুল হক মুক্তি

নড়াইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ বলেন, “একবার সতর্ক করার পরও শনিবার প্রথম প্রহর পর্যন্ত নড়াইল-১ আসনের সাংসদ কালিয়া পৌরসভায় দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করার গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে ইসি। চূড়ান্ত সতর্ক করার পর এখন কোথায় আছেন তিনি জানি না। আমরা নজর রাখছি।”

মুক্তিকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, “যেহেতু আপনি বিধিবহির্ভূতভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন, তাই আপনাকে নড়াইল-১ (কালিয়া)  নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করার জন্যে ইসি নির্দেশনা দিয়েছেন। আপনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণে নির্বাচন বন্ধ হলে এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্যে ইসি তথা সরকারের যে আর্থিক ব্যয় হবে পরবর্তীতে তার দায় দায়িত্ব নিরূপণ করা হবে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে এটা অপপ্রচার। আমি তো এখন এলাকা ছাড়া। কালিয়া ছাড়ার জন্যে নোটিস পাওয়ার পরই আমি রাত ১২টার পরে চলে আসি। এলাকার বাইরে থাকায় ভোট বন্ধ করার তো দরকার পড়ছে না।”

এখন খুলনায় অবস্থান করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র করে’ অভিযোগ এনেছে। কারও পক্ষে প্রচারণা চালাননি তিনি। তার কাছেই প্রার্থীরা চলে আসেন।

১৪ এমপি এলাকাছাড়া

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মো. আফজাল হোসেন, রাজবাড়ী-২ আসনের মো. জিল্লুল হাকিম, গাইবান্ধা-৫ আসনের সাংসদ ফজলে রাব্বি মিয়া, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেন গুপ্ত, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এম এ মতিন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের মো. আবু জাহির, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোণা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালকে এলাকা ছাড়ার নোটিস দেয় ইসি।

ভোট তথ্য

>> ২৫ জেলার ১১৭টি উপজেলা ভোট।

>> বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ৫৬ জন। চেয়ারম্যান ৩৩, ভাইস চেয়ারম্যান ৯, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ১৪ জন।

>> ভোটের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদে ৩৫৮, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬০৪ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪১৪ জন।

>> ১১৭ উপজেলায় ৯৮৫৭কেন্দ্রে ভোটার ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ৬১৪৪ জন।

>> ১২৭ উপজেলায় ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী ধাপে স্থানান্তর, আদালতের আদেশে স্থগিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ১০ উপজেলা বাদ পড়েছে।

>> বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে ৬ উপজেলায় ভোটের দরকার পড়ছে না।

তৃতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোট

ইসির জনসংযোগ শাখা জানায়, তৃতীয় ধাপে ১১৭ উপজেলায় ভোট হবে রোববার। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটকেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠানো হয়েছে।

এবার উপজেলার ভোট হচ্ছে পাঁচ ধাপে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপের ভোট শেষ হয়েছে ১০ মার্চ ও ১৮ মার্চ।

দলীয় প্রতীকে এই প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলের বর্জনের কারণে ভোটে লড়াইয়ের আমেজ দেখা যায়নি।

প্রথম ধাপে ৪৩ শতাংশ ও দ্বিতীয় ধাপে ৪১ শতাংশ ভোট পড়ে।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় প্রথম ধাপে ২৮ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিত হলেন ৪৮ জন। তৃতীয় ধাপে ৫৬ জন পার হন বিনা ভোটে।

ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপের উপজেলাগুলোতে হবে ভোট। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন।

আরও খবর