শুক্রবার বিকালে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক বক্তৃতায় একথা বলেন তিনি।
তরুণদের বাঙালির পুরো ইতিহাস জানার পরামর্শ দিয়ে হাসান আজিজুল হক বলেন, “শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানলে চলবে না, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস তোমাদের জানতে হবে। তোমরা সবটুকুই জানো, ভালো-মন্দ দিক সবটাই জানা উচিৎ। কী করে তারা একটি দেশের মালিক হল, কীভাবে একটি জাতি নিজের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে দেশ গঠন করল- সে কথা জানতে হবে।
“তাহলে একদিন তোমরা এক নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারবে। দেশকে ভালোবেসে তোমরা বাংলাদেশকে একদিন সর্বশ্রেষ্ঠ দেশে পরিণত করবে।”
ইতিহাসবিমুখ হলে নতুন প্রজন্ম ‘মূর্খ’ থেকে যাবে বলে সতর্ক করে প্রবীণ এই অধ্যাপক।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমরা মুক্তমন নিয়ে দেশের ইতিহাসকে জানবে। তবে পর পর কয়েকটা ঘটনা সাজালে কিন্তু হবে না। তোমাদের পুরোটাই জানতে হবে।”
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ এখনও মেনে নিতে পারেননি এই লেখক।
তিনি বলেন, “এ এক অবাস্তব রাষ্ট্র। হাজার হাজার মাইলের ব্যবধানে একটি দেশ, এ দেশে এসে শাসন করবে। এটা কোনো যুক্তিতে মেনে নেওয়া যায় না। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এই সময়ে কেমন জীবনে থাকতে হয়েছিল, তা আমি জানি।”
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রত্যাশা জানিয়ে হাসান আজিজুল হক বলেন, “প্রতিটি জাতির আলাদা আলাদা ধর্ম, সংস্কৃতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিটি জাতিতেই সূক্ষ্ম ভেদাভেদ থাকে। তাকে অন্য মানুষকে তো জায়গা দিতে হবে। মানুষের একেবারে ভেতরে যে মানুষটা রয়েছে, সে মানুষটাকে আমাদের জানতে হবে। সভ্যতার নানা বৈচিত্র্য থাকবেই। তবে মানু্ষের মূল যে বুদ্ধিবৃত্তি, সেটার তো বিনাশ নাই।”
মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ চরম সঙ্কটেও কখনো ‘অন্যদের মুখাপেক্ষী হয়নি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অনেক দুর্নাম ছিল বাংলাদেশের। অথচ আজকে আমরা শ্রেষ্ঠতম জাতি। বাংলা ভাষা পৃথিবীর পঞ্চম শ্রেষ্ঠ ভাষা, যে ভাষায় কথা বলে ৩৩ কোটি লোক।”
বাংলাদেশের এই অভ্যুত্থানের জন্য তিনি সর্বাগ্রে উচ্চারণ করতে চান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম।
“স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। শেষে আত্মত্যাগ করলেন, সপরিবারে নিজের জীবন দিয়ে। তার নাম সবার আগে উচ্চারণ করতেই হবে।”
মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ এখন উন্নতির পথে ‘প্রত্যুষকাল’ অতিক্রম করছে বলে মন্তব্য করেন হাসান আজিজুল হক।
তিনি বলেন, “তবে বাংলাদেশের সমাজ, সাহিত্য আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে।”
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গঠনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের দায়িত্ব যখন শেষ হয়ে এসেছে, তখন এ দায়িত্বের গুরুভার নতুন প্রজন্মকে কাঁধে তুলে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন হাসান আজিজুল হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন আরেক ট্রাস্টি রবিউল হুসাইন।