গুলশান হামলা: ছদ্মনামে রূপনগরে বাসা ভাড়া নেন জঙ্গি তানভীর

প্রকৃত নাম লুকিয়ে নিজেকে ‘ইসমাঈল’ পরিচয় দিয়ে রূপনগরে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন জঙ্গিনেতা তানভীর কাদেরী। পরে বাড়িওয়ালা তার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে বাসা ছেড়ে চলে যান তিনি।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2019, 03:23 PM
Updated : 21 March 2019, 03:30 PM

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলার সাক্ষ্যে এই তথ্য উঠে আসে।

বৃহস্পতিবার আদালতে রূপনগরের সেই বাড়ির মালিক নূরজাহান ইসলাম এবং তত্ত্বাবধায়ক মো. দাঊদ ছাড়াও সাক্ষ্য দেন আরও পাঁচজন।

অন্য সাক্ষীরা হলেন সেদিন জঙ্গিদের গুলিতে নিহত বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের স্ত্রী রেমকিন, গুলশানে জঙ্গি হামলার আগে আসামি রিগ্যান যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির মালিক ইফতেখার হাসান আবির এবং ৫ বিদেশি বহনকারী প্রাইভেটকারের চালক শরীফুল ইসলাম।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আলোচিত এই মামলায় তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আগামী ২৭ মার্চ পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।

আদালতে দাঊদ বলেন, “২০১৬ সালের ১ জুন ইসমাঈল নামে এক ব্যক্তি বাসা ভাড়া নেয়। বাসায় ওঠার পর তার কাছে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হয়। ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়ায় ওই মাসের ১১ বা ১২ তারিখে সে বাসা ছেড়ে চলে যায়।”

পরে পুলিশ এই বাসায় এসে ‘ইসমাঈলের’ ছবি দেখিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে জানান দাঊদ।

তিনি বলেন, ছবি দেখে তিনি ওই ব্যক্তিকে ইসমাঈল বলে চিহ্নিত করার পর পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পারেন, ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম তানভীর কাদেরী।

তানভীর বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় ওমরা করতে সৌদি আরবে ছিলেন বাড়ির মালিক নূরজাহান ইসলাম।

তিনি বলেন, “দাঊদ আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, ইসমাঈল নামে একজন জুন মাসে বাসা ভাড়া নেয়। তার কাছে ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে সে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।”

পুলিশ পরে জানায়, তানভীর তার দল নব্য জেএমবিতে ‘আব্দুল করিম’ ও ‘শমসেদ’ নামে পরিচিত ছিলেন। করিম নাম ব্যবহার করেই তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গুলশান হামলাকারীদের জন্য ফ্ল্যাট ভাড়া করেছিলেন।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ‌্যে ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযানের সময় টিকতে না পেরে তানভীর আত্মহত‌্যা করেন বলে পুলিশের ভাষ‌্য।

মারা যাওয়ার কারণে তাকে গুলশা হামলার মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

মামলার অন্য সাক্ষী ইফতেখার হাসান আবির বলেন, “হলি আর্টিজানে হামলার আগে রফিকুল ইসলাম রিগ্যান নামে এক ব্যক্তি আর বাসায় ভাড়া থাকতো। পরবর্তীতে সে চলে যায়।”

তিনিও পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন রিগ্যান হলি আর্টিজান মামলার আসামি।

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ৫ জন বিদেশিকে বেকারির সামনে এসে নামিয়ে দেন প্রাইভেটকার চালক শরীফুল ইসলাম।

সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “উনাদের হলি আর্টিজানের সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি রেজিস্ট্রার খাতায় লিখছিলাম।

“আনুমানিক ৮টা ৪০ মিনিট কি ৪৫ মিনিটের দিকে বিকট শব্দ শুনতে পাই। লোকজনকে ছুটোছুটি-দৌড়াদৌড়ি করতে দেখতে পাই। আমি নিয়ে আসা ওই পাঁচ ফরেনারকে ফোন দিতে থাকি। তারা আমার ফোন ধরেননি। পরে আমি অফিসে আমার অ্যাডমিন কামালকে ফোন দেই। পরে কামাল এবং মনোহর আমার কাছে আসেন।”

সেদিন সারারাত তারা গাড়িতে বসেছিলেন বলে জানান শরীফুল।

“পরের দিন ২টায় গাড়ি নিয়ে অফিসে যাই। ৫টার দিকে অফিসে গাড়ি জমা দিয়ে বাসায় যাই। পরবর্তীতে টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারি, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশসহ বাইশ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে আমি যে পাঁচজনকে নিয়ে আসি তারাও মারা যান।”

গত ৩ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর এ মামলায় প্রসিকিউশনের মোট ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে এ নিয়ে ২৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

গত ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

আসামিরা হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

এরা সবাই কারাগারে আছেন। এদিন তাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।