সুপ্রভাতের বাস সম্রাট হয়ে নামার প্রস্তুতিতে

ছাত্রবিক্ষোভের মুখে সুপ্রভাত পরিবহনের সব বাসের ঢাকায় চলাচল নিষিদ্ধ করায় সেগুলো এখন রঙ ও নাম বদলে অন্য পরিবহনের নামে সড়কে নামানোর চেষ্টায় আছেন মালিকরা।

আবুল হোসেন গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2019, 06:05 PM
Updated : 20 March 2019, 06:05 PM

বুধবার সন্ধ্যার পর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগেই সুপ্রভাতের কয়েকটি বাসে রঙ করে ‘সম্রাট ট্রান্সলাইন (প্রা.) লি.’ লিখতে দেখা যায়।

বিকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গাজীপুরায় হয় বাসে রঙ করে নাম বদলের এই কাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার বসুন্ধরায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মারা যাওয়ার পর বদলে যাচ্ছে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের রং ও নাম। এ কোম্পানির বিভিন্ন বাস রং বদলে সম্রাট পরিবহনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর সদরঘাট থেকে রামপুরা হয়ে উত্তরা পর্যন্ত ‘সুপ্রভাত স্পেশাল সার্ভিস’-এর রুট পারমিট। তবে সদরঘাট থেকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর গাজীপুরা পর্যন্ত চলে এই বাস। সুপ্রভাতের ব্যানারে চলাচলকারী এসব বাসের মালিক রয়েছেন বেশ কয়েকজন।

ওই বাস মালিকরা এখন তাদের সুবিধামতো বিভিন্ন কোম্পানিতে নিজেদের বাস ঢোকাতে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান ওই শ্রমিক নেতা।

মঙ্গলবার সকালে ঢাকার নদ্দা এলাকায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) এক ছাত্র নিহত হন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে সারাদিন সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন।

বুধবারও ওই এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ধানমণ্ডি, বাড্ডা নও মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।

পরে বিকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণে সাত দিনের সময় দিয়ে আন্দোলন এক সপ্তাহ স্থগিতের ঘোষণা দেন বিইউপির শিক্ষার্থীরা।

তাদের ওই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিআরটিএ’র এক চিঠিতে সুপ্রভাত জাবালে নূর পরিবহনের সব বাস ও মিনিবাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা জানায় বিআরটিএ। গত বছর জুলাইয়ে ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূরের বাসচাপায় দুই কলেজছাত্র নিহত হওয়ার পর ঢাকার রাস্তায় নেমে এসেছিল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। টানা কয়েকদিন তাদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছিল ঢাকা।

এখন এই দুই পরিবহনের সব বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সেগুলোর কাগজপত্র যাচাইয়েরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিএ।

তবে তার আগেই সুপ্রভাতের বাস সম্রাট নামে আবারও রাস্তায় নামছে। ঢাকার মহাখালী থেকে উত্তরা, টঙ্গী হয়ে গাজীপুরা পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেওয়া করে সম্রাট পরিবহন।

তবে সুপ্রভাতের কতগুলো বাস এরইমধ্যে সম্রাটে রূপ নিয়েছে, সে তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

একাধিক শ্রমিক, বাস চালক ও সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘সুপ্রভাত স্পেশাল সার্ভিস’-এর রুট পারমিট সদরঘাট থেকে উত্তরা পর্যন্ত হলেও পরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতার কারণে সেগুলো গাজীপুরা পর্যন্ত চলাচল করে।

বিআরটিএ’র অনুমোদন চেয়েও কয়েক গুণ বাস বেশি চলে অভিযোগ করলেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রভাত সার্ভিসের টঙ্গী স্টেশন রোডের সুপারভাইজার কামরুল ইসলাম বলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের রং বদলে অন্য পরিবহনের নামে চলার বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে মালিকপক্ষ বলতে পারবে। 

নিহত আবরার চৌধুরীর  বাবা মামলায় সুপ্রভাতের বাস চালক সিরাজুল ইসলামের পাশাপাশি বাস মালিককেও আসামি করেছেন। এরপর এই পরিবহন কোম্পানির মালিকরা প্রকাশ্যে এসে কথা বলছেন না।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) সহকারী কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, “সুপ্রভাত পরিবহনের কোনো বাস অন্য কোম্পানির নামে পরিবর্তিত হচ্ছে এমনটা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

তিনি বলেন, “সুপ্রভাত পরিবহনের কোনো বাস এই রুটে চলতে পারবে না। তবে সুপ্রভাত ছাড়াও যে কোনো কোম্পানির বাস অন্য যে কোনো কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধা নেই।

“তবে সেটা দেখতে হবে বাসটি যে কোম্পানিতে যাচ্ছে সে কোম্পানিটির বৈধ অনুমোদন আছে কি না। কোনো কোম্পানিতে বাসের সংখ্যা নির্ধারণ করা থাকে কি না, সেটা আমার জানা নেই।”