বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু বিবেচিত হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু বিবেচিত হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2019, 07:49 PM
Updated : 14 March 2019, 08:07 PM

২০১৮ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েও সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে।

বুধবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ‘অভাবনীয় একপেশে’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত হয়নি৷ ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরা, বিরোধীদের পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোমতোর নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনে।”

এছাড়া নির্বাচনের প্রচারের সময় হয়রানি, ভয় দেখানো, হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার ও সহিংসতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ খবর রয়েছে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, “এতে অনেক বিরোধী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের জন্য বৈঠক, জনসভা এবং স্বাধীনভাবে প্রচার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।”

বার্ষিক এই প্রতিবেদনে বিশ্বজুড়ে সহিংসতা, নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতার বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর নাগাদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ক্রসফায়ারে’ চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।

ডানঘেঁষা মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে পরিচিত অধিকার-এর বরাত দিয়ে বলা হয়, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪১৫ জনকে ‘হত্যা করেছে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ ও সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশে গুম ও অপহরণের ঘটনাও অব্যাহত থাকার খবর দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অধিকাংশ ঘটনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অভিযোগ তোলা হয়েছে।

“এ ধরনের ঘটনা তদন্ত বা বন্ধে সরকার সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে,” বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এই প্রতিবেদনে।

এছাড়া মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দুর্নীতি, সমকামীদের প্রতি সহিংসতা, শ্রমিক ইউনিয়নে বাধা দেওয়া ও শ্রমিক অধিকারসহ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সরকারের সমালোচনা বা বিরোধীদের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য প্রচারের জন্য ‘সংবাদমাধ্যমকে মাশুল দিতে হয়েছে’ বলে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “অগাস্টে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ সংকুচিত করতে সরকার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সরকারি কর্মকর্তারা সড়কে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর সম্প্রচারে না করেছিল বলে টেলিভিশন স্টেশনগুলো জানিয়েছিল।”

বাংলাদেশ সরকার ‘শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের’ সুযোগও সীমিত করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আলোচনায় গত বছর ১৮ জুন সরকারের কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বন্ধের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এই প্রতিবেদনে।