ডাকসু: আন্দোলনের মধ্যে অভিষেকের প্রস্তুতি

পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদে নির্বাচিতদের অভিষেকের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মাসুম বিল্লাহও ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2019, 02:57 PM
Updated : 14 March 2019, 03:04 PM

অভিষেকের দিনক্ষণ এখনও ঠিক না হলেও খুব শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচিতদের সঙ্গে আলোচনা করে অভিষেকের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করছি না; তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হবে।”

প্রায় তিন দশকের অপেক্ষার পর গত ১১ মার্চ ডাকসু ও ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন হয়। অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে ভোট শেষ হওয়ার আগেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় পাঁচটি প্যানেল।

সেদিন গভীর রাতে ঘোষণা করা ফলাফলে দেখা যায়, ডাকসুতে মোট ২৫টি পদের মধ্যে জিএস-এজিএসসহ ২৩টি পদে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ।

বর্জনের মধ্যেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয়ী হন একই প্যানেলের আখতার হোসেন।

ভোটের পর থেকেই ডাকসুতে নির্বাচিতদের ‘শপথ গ্রহণের’ বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। তবে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে শপথ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নেই। একটি অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নির্বাচিতরা দায়িত্ব বুঝে নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ জানান, ডাকসুতে নির্বাচিতদের অভিনন্দন জানিয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “পুনর্নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই, সেটা আমরা আগেই বলেছি। এখন অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের দিকে যাব আমরা।”

অধ্যাপক সামাদ বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডাকসুর মেয়াদ অভিষেকের দিন থেকে ৩৬৫দিন। যত দ্রুত দায়িত্ব দেওয়া হবে তত ভালো হবে।”

ডাকসুর অভিষেক নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠক করেন নবনির্বাচিত ভিপি নূর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু এবং হল সংসদের নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনঃতফসিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তৃতীয় দিনের মতো অনশনে এক শিক্ষার্থী।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “উপাচার্যের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, অভিষেকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।”

আগের দিন ভোট বর্জনকারী প্যানেলগুলোর বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়ে ৩১ মার্চের মধ্যে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন নূর। বর্জনকারী পাঁচটি প্যানেলের মধ্যে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদও রয়েছে, নূর ওই সংগঠনের অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক।

উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে এলেও ভিপি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু বলেননি নুরুল হক নূর। 

বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার একটি সংগঠন রয়েছে। তারা আমার সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছে, শ্রম দিয়েছে, সময় দিয়েছে। নির্বাচনে এত কারচুপির মধ্যেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমার পক্ষে কাজ করেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি, তাদের মোটিভ কী, তারা কী চাচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছি।

“তারা যদি চায় যে আমি ভিপি হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে তাদের জন্য লড়াই সংগ্রাম করি, তাহলে আমি সেটা করব। তারা যদি না চায় তাহলে আমি দয়িত্ব গ্রহণ করব না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু এবং হল সংসদের নির্বাচনের ফল বাতিল করে পুনঃতফসিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার রোকেয়া হলের ফটকে অনশনরত পাঁচ শিক্ষার্থী।

এদিকে ডাকসু নির্বাচনের পুনঃতফসিলের দাবিতে কর্তৃপক্ষকে শনিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছে নির্বাচন বর্জনকারী পাঁচটি প্যানেল।

পুনরায় ডাকসু নির্বাচন ও ভিপি নূরসহ ডাকসুর কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে অনশন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থী; তাদের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন।

রোকেয়া হল সংসদের পুনঃনির্বাচন ও প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদার পদত্যাগসহ হলের সামনে অনশন করছেন নির্বাচনের প্রার্থী ও শিক্ষার্থী মিলে পাঁচজন।

শিক্ষার্থীদের অনশনের বিষয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সামাদ বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি জানাচ্ছে। আমাদের প্রক্টরিয়াল টিম তাদের খোঁজখবর রাখছে এবং চিকিৎসার বিষয়টি দেখভাল করছে। তবে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, ডাকসুর পুনর্নির্বাচনের আর সুযোগ নেই।”