উপজেলা ভোট শুরু: প্রথম ধাপ ‘মোটামুটি শান্তিপূর্ণ’

সারাদেশের ৭৮ উপজেলায় ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হল পাঁচ ধাপের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 March 2019, 03:11 PM
Updated : 10 March 2019, 05:27 PM

রোববার অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণকে ‘মোটামুটি শান্তিপূর্ণ’ বলেছে নির্বাচন কমিশন। বড় ধরনের সংঘাতের খবর কোথাও থেকে আসেনি।

তবে নানা অনিয়মের কারণে ২৮টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করা হয়েছে; গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে।

দলীয় প্রতীকে এই প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও বিএনপিসহ বেশিরভাগ দলের বর্জনের কারণে ভোটের লড়াইয়ের আমেজ দেখা যায়নি। অনেক ভোটকেন্দ্র দুপুরেও ছিল অনেকটাই ভোটারশূন্য।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ইতোমধ্যে ২৮ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সকাল সাড়ে ১০টায় ভোটারশূন্য ছিল কাকনহাট কলেজ কেন্দ্র।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তিন মাসের মধ্যে সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে নেমেছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন।

এবার পাঁচ ধাপে ভোট হচ্ছে। মার্চেই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ভোট হবে। বাকি উপজেলাগুলোতে ভোট হবে রোজার পর আগামী জুন মাসে।

পরবর্তী ধাপ

>> দ্বিতীয় ধাপে ভোট ১৮ মার্চ; তৃতীয় ধাপে ভোট ২৪ মার্চ; চতুর্থ ধাপে ভোট ৩১ মার্চ; পঞ্চম ও শেষ ধাপে ভোট ১৮ জুন।

প্রথম ধাপে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রজশাহী বিভাগের ৭৮ উপজেলায় একযোগে ভোটগ্রহণ চলে।

ভোটগ্রহণ শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, “প্রথম ধাপে যে নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচন কমিশন মনে করে যে, নির্বাচন মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”

উপজেলা নির্বাচনে কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দুপুর ১২টায়ও ছিল এমন ভোটারশূন্য।

এই ৭৮টি উপজেলায় ভোটকেন্দ্র ছিল ৫ হাজার ৮৪৭টি। এর মধ্যে অনিয়মের কারণে ২৮টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, “এগুলোতে পরবর্তীতে ভোট হবে। এছাড়া অন্য কেন্দ্রগুলোয় সুষ্ঠুভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অনিয়মের কারণে সিরাজগঞ্জে দুজন প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

“তিনজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে..এছাড়া যারা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিল এমন ১০ জনের অধিককে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”

অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দায়ী করা হবে বলে ঘোষণা দিলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ভোট তথ্য

# প্রথম ধাপের ৭৮ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০ জন।

# মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭টি।

# চেয়ারম্যান পদে ২০৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

# প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ছয়জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন রয়েছেন।

ভোটারদের উপস্থিতির হার সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, “উপস্থিতির হার এখনও আমরা জানতে পারিনি। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ভোট গণনা শুরু হয়েছে। এটা শেষ হলে পরবর্তীতে জানাতে পারব কত শতাংশ ভোট পড়েছে।”

উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরুর আধা ঘণ্টা পর কুড়িগ্রামের সদরের কিশলয় আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টায়ও ছিল এমন ভোটারশূন্য। রোববার এই জেলার ৮টি উপজেলায় নির্বাচন হয়।

তবে ভোটারদের উপস্থিতি ‘মোটামুটি সন্তোষজনক’ বলে মন্তব্য করেন হেলালুদ্দীন।

তিনি বলেন, “স্বাভাবিকভাবে যখন খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় এবং সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তখন ভোটারদের উপস্থিতি বাড়া স্বাভাবিক।”

প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। তার মধ্যে আদালতের আদেশে তিনটি ও কমিশন তিনটি উপজেলার ভোট স্থগিত করে। এছাড়া তিনটি উপজেলার সব পদে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন পড়েনি। ফলে ৭৮টি উপজেলায় ভোট হয়।

পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হচ্ছে ১০ মার্চ থেকে; প্রথম ধাপে ৮৭টি উপজেলায় ভোট হবে। নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শনিবার রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠার পর সম্প্রতি নয়জন সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তাতেও কাজ না হওয়ায় শুক্রবার তিন উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, “কমিশন মনে করেছেন যে, এখানে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন এ পর্যায়ে সম্ভব নয়। পরবর্তীতে এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে। কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছেন যে, এই নির্বাচন বন্ধ করা প্রয়োজন।”

নির্বাচনে শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পরেও দুই দিন মাঠে থাকবে তারা।

নির্বাচন সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ করতে রিটানিং ও সহকারী রিটানিং কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভোটে অনিয়ম হলে সেই দায় তাদের নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কমিশন।