যুদ্ধাপরাধ: নেত্রকোণার আঞ্জু-ছোরাপের রায় যে কোনো দিন

নেত্রকোণার আটপাড়া থানার হেদায়েত উল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি এবং সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলীর বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় হবে যে কোনো দিন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2019, 04:17 PM
Updated : 7 March 2019, 04:17 PM

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মত মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয় ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এ দুই আসামিদের বিরুদ্ধে। 

আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে বিচার চলার পর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন।

শুনানি শেষে বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।

এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে আঞ্জুর ভাই এনায়েত উল্লাহ ওরফে মঞ্জুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে তার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

পরে ওই বছরই কারাগারে থাকা ছোরাপ ও পলাতক আঞ্জুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। আসমিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আব্দুস শকুর খান।

তাপস কান্তি বল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ট্রাইব্যুনালের আগের চেয়ারম্যানের অসুস্থতা ও মৃত্যু এবং ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের কারণে বিচার কার্যক্রম দীর্ঘদিন থমকে ছিল। ফলে এ মামলার বিচার কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আমরা শুনানিতে দুই আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি।”

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী শকুর খান বলেন, “অভিযোগের পক্ষে প্রসিকিউশন যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছে তাতে আসামিদের অপরাধ প্রমাণে তারা ব্যর্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি। চূড়ান্ত যুক্তিতর্কে আমি আসামিদের খালাস চেয়েছি।”

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আঞ্জু, মঞ্জু ও ছোরাপ একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আটপাড়ার মধুয়াখালী, মোবারকপুর ও সুখারী গ্রাম এবং মদন থানার মদন গ্রামে তারা বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের অভিযোগে।

মামলা বৃত্তান্ত

প্রসিকিউশনের তদন্ত দল এ মামলার অনুসন্ধান শুরু করে ২০১৫ সালের ৫ মে। আঞ্জু, মঞ্জু ও ছোরাপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অভিযোগের বিষয়ে ৪০ জনের জবানবন্দি শোনেন তদন্ত কর্মকর্তারা। 

তিনজনেরই গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার আটপাড়া থানার কুলশ্রীতে। একাত্তরে তারা ওই এলাকাতেই থাকতেন। পরে আঞ্জু রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার হেতেম খাঁ মেথর পাড়ায় থাকতে শুরু করে। আর ছোরাপ বসবাস করতেন নেত্রোকোণার মদন থানার জাহাঙ্গীরপুরে।

ছোরাপকে ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে ট্রাইব্যুনালের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আর এনায়েত উল্লাহ ওরফে মঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয় ওই বছরের ৩০ মার্চ। তার ভাই আঞ্জুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি।    

প্রায় দেড় বছর তদন্তের পর ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ওই তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

মামলার বিচার শুরুর আগেই ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এনায়েত উল্লাহ ওরফে মঞ্জু।

এরপর ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামি হেদায়েতুল্লাহ আঞ্জু ও ছোরাপ আলীর বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল।

যুদ্ধাপরাধের ৬ অভিযোগ

অভিযোগ ১: একাত্তরের ২৯ মে নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া থানার মধুয়াখালী গ্রামে ২০-৩০টি ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং গণহত্যার সমতুল্য অপরাধ।

অভিযোগ ২: একাত্তরের ২৩ অগাস্ট নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া থানার মোবারকপুর গ্রামের শহীদ মালেক তালকুদার ও কালা চান মুন্সীকে অপহরণ, হত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।

অভিযোগ ৩: একাত্তরের ৩০ অগাস্ট নেত্রকোণা জেলার মদন থানার মদন গ্রামের শহীদ হেলিম তালুকদারকে অপহরণ ও হত্যা এবং লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।

অভিযোগ ৪: একাত্তরের ৩ সেপ্টেম্বর নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া থানার সুখারী গ্রামের দীনেশ চন্দ্র, শৈলেশ চন্দ্র, প্রফুল্ল বালা, মনোরঞ্জণ বিশ্বাস, দূর্গা শংকর ভট্টাচার্য্য, পলু দে, তারেশ চন্দ্র সরকারকে অপহরণ, হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ এবং বেশ কিছু হিন্দু পরিবারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা।

অভিযোগ ৫: একাত্তরের ২ সেপ্টেম্বর নেত্রকোণা জেলার মদন থানার মাঝপাড়া গ্রামের হামিদ হোসেনকে অপরাহরণ, নির্যাতন।

অভিযোগ ৬: একাত্তরের ৬ সেপ্টেম্বর নেত্রকোণা জেলার মদন থানার মদন গ্রামের ১৫০-২০০টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা।