চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ বৃষ্টি-দোলা

দুই বান্ধবী ফাতেমাতুজ জোহরা বৃষ্টি ও রেহনুমা তারান্নুম দোলা; চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ তারা।

কামাল তালুকদার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2019, 05:41 PM
Updated : 1 March 2019, 10:51 AM

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডেই এই দুজন নিহত হন বলে ধারণা পুলিশের; কিন্তু এখনও লাশ খুঁজে পাননি স্বজনরা।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে চাইল্ড কেয়ার বিভাগের শিক্ষার্থী বৃষ্টি এবং ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের আইনে পড়ুয়া দোলা দুজনেই বাসা চকবাজারে, অগ্নিকাণ্ডস্থলের কাছেই। দুজনের বন্ধুত্ব শৈশব থেকে।

২০ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে সন্ধান না পাওয়ার পর দোলার বাবা দলিলুর রহমান দুলাল লালবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

তাতে তিনি বলেন, দোলা আর বৃষ্টি ওই রাতে শিল্পকলা একাডেমি থেকে অনুষ্ঠান শেষে তাদের লালবাগ এবং হাজি রহিম বক্স লেনের বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন।

অগ্নিকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর বৃহস্পতিবার হাজি রহিম বক্স লেনে বৃষ্টির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মেয়ের খোঁজ না পেয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন তার মা সামছুন্নাহার।

কিছু জানতে চাইলে শুধু বলেন, “আমার মেয়েকে চাই, ওকে এনে দেন।”

গত কয়েকদিন ধরেই এই অবস্থা চলছে বলে জানান বৃষ্টির দাদি আয়শা খাতুন। নাতনী নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন তিনি।

বৃষ্টির বাবা ব্যবসায়ী জসিমউদদীন বাড়িতে ছিলেন না। আয়শা খাতুন বলেন, “অনেক বুঝিয়ে আজ ওকে দোকানে (নিউ মার্কেটে) দোকানে পাঠিয়েছি।”

চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডের শিকার দুই বান্ধবী হয়েছেন ধারণা করে ঢাকা মেডিকেলেও ছুটে গিয়েছিলেন তাদের স্বজনরা। কিন্তু আগুনে পোড়া মৃতদেহ থেকে বৃষ্টি ও দোলাকে শনাক্ত করতে পারেনি তারা।

এই অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে ৬৭টি পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়, যার মধ্যে ১৯টি শনাক্ত হয়নি। এই লাশগুলোর দাবিদার আবার ২৩টি পরিবার। শনাক্তের জন্য এই ২৩ পরিবারের ৫৮ জনের ডিএনএ নমুনা নিয়েছে সিআইডি।

বৃষ্টি ও দোলার পরিবারের সদস্যরাও ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন সিআইডিকে।

বৃষ্টির দাদি বলেন, অগ্রণী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে বৃষ্টি ও দোলার বন্ধুত্ব। বিভিন্ন সময়ই তারা একসঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেত। তাদের সূত্রে দুই পরিবারেরও সখ্য গড়ে ওঠে।

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বৃষ্টি সবার বড়। তার এক ভাই সাহিদুল ইসলাম সানি এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন, ছোট ভাই সামি জাবের শুভ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

শুভ বোন বৃষ্টির কক্ষের টেবিল আর ছোট্ট খাট দেখিয়ে বলেন, “আপু আর্টও করতে পারত। সেদিন শিল্পকলা একাডেমিতে আবৃত্তি করতে গিয়েছিল।”

বৃষ্টির কক্ষের দেয়ালে আঁকা ছবি আর টেবিল ভরা বই দেখা যায়। তা দেখিয়ে কাঁদতে থাকেন দাদি আয়শা।

লালবাগ থানার ওসি সুবাস চন্দ্র সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে তারা শতভাগ নিশ্চিত যে দোলা ও বৃষ্টি চুড়িহাট্টার আগুনেই মারা গেছেন।

তিনি বলেন, “হায়দার বক্স লেন থেকে পাওয়া একটি ভিডিও ফুটেজ থেকেও নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা আগুনে পড়ে মারা যায়।”

এই অবস্থায়ও প্রতারণা!

বৃষ্টি ও দোলার পরিবারের এই দুরবস্থার মধ্যেই প্রতারণার শিকার হয়ে লাখ টাকা খুইয়েছে দুই পরিবার।

আয়শা বেগম বলেন, “আমাদের এই বিপদের দিনেও গত শুক্রবার বিকালে বৃষ্টির নম্বর থেকে তার বাবা জসিমকে ফোন দিয়ে বলে, বৃষ্টি ও দোলা আমাদের কাছে আছে, টাকা লাগবে।”

দুই পরিবার ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার রাত ৯টার পর থেকে সেই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ।

লালবাগ থানার ওসি সুবাস সাহা বলেন, এই প্রতারণার ঘটনার একটি মামলা হচ্ছে।

বৃষ্টির মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসার বিষয়ে তিনি বলেন, “থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করে কলটি করে এই প্রতারণা করেছে।”