ছিনতাইকারী যুবক বিমানে ‘পটকা ফাটিয়েছিলেন’

বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী যুবক গুলি ছুড়েছিলেন বলে যাত্রীদের মধ্য থেকে যে বক্তব্য এসেছে, তা আসলে পটকা জাতীয় কোনো বিস্ফোরকের শব্দ বলে দাবি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 07:17 PM
Updated : 25 Feb 2019, 07:20 PM

বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঝড় তোলা এই ঘটনায় সোমবার রাতে বেবিচেকের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় যে মামলাটি করেন, তাতে একথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ১৫ মিনিট পরই পলাশ বোমা সদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।

“কেবিন ক্রু সাগর ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারী (পলাশ) বিমানের মাঝখান দিয়ে দৌড় দিয়ে সামনের ককপিটে ঢোকার চেষ্টা করে। তার হাতে বোমা ও অস্ত্র সদৃশ বস্ত দেখা যায়।

“উক্ত দুষ্কৃতকারী তার কিছু দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে শুনতে হবে বলে চিৎকার করে। অন্যথায় সে বিমানটি তার কাছে থাকা বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে দেবে মর্মে হুমকি দেয়।

“উক্ত দুষ্কৃতকারী ওই সময় ২টি ফটকা (পটকা) জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণ ঘটায়।”

রোববার বিকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই পলাশ আহমেদ নামে ওই যুবক আগ্নেয়াস্ত্র ধরে পাইলট ও ক্রুদের জিম্মি করেন বলে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছিলেন।

ওই বিমানের দুই যাত্রী শাহ আমানতে নামার পর বলেছিলেন, ছিনতাইকারী গুলি ছুড়েছিল।

কক্সবাজার জেলার পেকুয়ার বাসিন্দা ওসমান গণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ (উড্ডয়নের) ১৫ মিনিট পরই ওই ব্যক্তি পিস্তল নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এ সময় সে যাত্রীদের উদ্দেশে বলে, কেউ উঠে দাঁড়ালে বা নড়াচড়া করলে গুলি করা হবে। এ সময় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এরপর ওই ব্যক্তি কয়েক রাউন্ড গুলিও ছোড়ে।”

সাদমান সাকিব নামে ওই ফ্লাইটের আরেক যাত্রী বলেন, “আমি প্লেনের পেছন দিকে ছিলাম। ছিনতাইকারীও পেছনে ছিল। হঠাৎ সে সামনে চলে যায়। এরপর দুটো গুলির শব্দ শুনি।”

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি নামার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ; তখন তার কাছ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধারের কথা জানিয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তারা।

অভিযানের পর শাহ আমানত বিমানবন্দরে ছিনতাইকারী যুবকের লাশ ঘিরে কমান্ডোরা

পরে রাতে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মাহবুবার রহমান জানান, ওই অস্ত্রটি খেলনা পিস্তল।

একই কথা বলেন বিমানমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীও। তাকে পাশে রেখে সোমবার দুপুরে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বেবিচক চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান বলেন, বিমানে কোনো গুলিবর্ষণ হয়নি।

“এয়ারক্রাফটে গুলি বিনিময় হলে তার চিহ্ন থাকত। আমরা কোনো চিহ্ন কোথাও পাইনি। খেলনা পিস্তলেও শব্দ হয়। যাত্রীরা শব্দ শোনার কথা বলেছে।”

ওই পিস্তলটি আসল না কি নকল- সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, তদন্ত না করে তা বলা যাবে না।

বেবিচক চেয়ারম্যান নাঈম হাসান আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “সো ফার আমি জানি, তার কাছে একটা অস্ত্র ছিল। বলেছে গায়ে বোম্ব জড়ানো আছে বা তার জড়ানো আছে। ওটা কী ছিল, সেটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।”

বেবিচকের করা মামলায় পলাশের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামির তালিকায় রাখা হয়েছে।

এই বিমান ছিনতাইচেষ্টায় একজনই জড়িত ছিলেন বলে অভিযান চালিয়ে বিমানটি মুক্ত করার পর এতে যুক্ত সব কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। ওই যুবক রোববার সন্ধ্যায়ই শাহ আমানত বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি নামার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন।

ওই যুবক তার স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন অভিযান পরিচালনাকারীরা।

পরে জানা যায়, এই যুবকের নাম পলাশ আহমেদ, তিনি চিত্রনায়িকা শিমলার স্বামী ছিলেন, সাড়ে ৩ মাস আগে শিমলা তাকে তালাক দেন।

এজাহারে আসামিদের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়, “পলাশ আহমেদ বিমানের পাইলট, কেবিন ক্রু ও যাত্রীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের হুমকি দিয়া জিম্মি করত আতঙ্ক সৃষ্টি করিয়া বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে।”