বিমান ছিনতাই: সর্বদলীয় সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি

সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করার দাবি উঠেছে আইন সভায়।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 02:15 PM
Updated : 25 Feb 2019, 02:15 PM

ঘটনার পরদিন সোমবার বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় এই দাবি তোলেন।

এর আগে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ওই ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করে সংসদে বিবৃতি দেন।

রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, “বিমান নিয়ে প্রায়ই এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। আসলে এই যে ব্যক্তিটি গেলেন। চারটি ধাপে চেক করে তারপর ভেতরে ঢুকতে হয়। তারপরও একটি লোক অস্ত্র নিয়ে কী করে গেল?

“তদন্ত কমিটি একটা ফরমাল প্রসেস। এটা করে। কখনও রিপোর্ট বের হয়, কখনও বের হয় না। এটা নিয়ে আসল তথ্য বের হবে না। প্রধানমন্ত্রী বিমান থেকে নামলেন, তারপরেই এই ঘটনা। এটাকে সহজভাবে নিতে পারি না। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার।”

সব দলের সংসদ সদস্যদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “তদন্ত করে সংসদকে জানাতে হবে। আর মন্ত্রীকে বলতে হবে, আর কখনও এমন ঘটনা ঘটবে না।”

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-১৪৭ রোববার বিকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই এক যবক অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করেন পাইলটসহ ক্রুদের।

ওই অবস্থায় বিমানের পাইলট চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিমানটি নামান। যাত্রী ও ক্রুদের নামিয়ে আনার পর কমান্ডো অভিযানে মারা পড়েন ওই যুবক।

ওই যুবক তার স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন বলে জানান অভিযান পরিচালনাকারীরা।

তার হাতে থাকা অস্ত্রটি খেলনা পিস্তল বলে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন।

যুবকের নাম পলাশ আহমেদ বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তার আঙুলের ছাপ তাদের ক্রিমিনাল ডেটাবেইজে থাকা এক অপরাধীর সঙ্গে মিলে গেছে বলেও র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পাইলট ও ক্রুদের পুরস্কৃত করার দাবি

জিম্মি সঙ্কটের প্রত্যক্ষদর্শী সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদল যাত্রীদের বাঁচানোসহ পুরো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহসী ভূমিকার জন্য ওই বিমানের পাইলট ও কেবিন ক্রুদের পুরস্কৃত করার দাবি জানিয়েছেন।

অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে তিনি প্রথমেই তার সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট করেন।

চট্টগ্রামের এই সংসদ সদস্য বলেন, “পত্র-পত্রিকায় আর টেলিভিশনে এসেছে, আমি ওই বিমানে ছিলাম। আমি ওখানে ছিলাম না। প্রধানমন্ত্রীর একটা অনুষ্ঠানে ছিল। তারপরে আমি ওখানে (বিমানবন্দর) ছিলাম ঢাকায় আসার জন্য।

“এয়ারপোর্টে যাওয়ার সাথে সাথে দেখলাম, লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছে। বললো, একটা প্লেন হাইজ্যাক হয়েছে। বলতে বলতে প্লেনটি ল্যান্ড করলো। এই প্লেনটাতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং ছিলেন। আমি বীরকে বললাম, সংসদ সদস্য হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এখানে থাকা। আমি টারমাক চলে গেলাম। টারমাকে আমাকে দেখে অনেকে মনে করেছে আমিও প্যাসেঞ্জার ছিলাম।”

জিম্মি সঙ্কটের অবসান পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সেখানে উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে বাদল বলেন, “নানা কাহিনী বিস্তার লাভ করেছে। মোদ্দা কথা হল, একজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি পেছন থেকে দৌড়ে এসে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছিল। পাইলটকে দরজা খোলার জন্য বলছিল। পাইলট দরজা খোলেনি। কতগুলো পত্রিকায় দেখলাম পাইলটের সাথে তার মল্লযুদ্ধ হয়েছে। এসব কিচ্ছু হয়নি। কেউ কেউ বলছে, তখন সে একটা গুলি করেছে। পাইলট কখনও দরজা খোলেনি। পাইলট তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। তখন সে বলেছে ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলতে চাই’। পাইলট তাকে এনগেজড রেখে বলেছে, ‘নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী কথা বলবে, একটু সম লাগবে’।

“পাইলট চট্টগ্রামের বিমানবাহিনীর কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করেছে। পাইলট অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে, ঠাণ্ডা মাথায়, সাহসিকতার সাথে চট্টগ্রামে প্লেনটি ল্যান্ড করে।

“আমাদের বিমানের যে ক্রু, তিনটা মেয়ে দুইটা ছেলে। ওদের নাম নিম্মি, হোসেনে আরা, রুমা, সাগর ও সাকুর। এরাও যাত্রীদের আশ্বস্ত করার জন্য ভূমিকা রেখেছে। তারা বিজনেস ও ইকোনমি ক্লাসের পর্দা টেনে দিয়ে দরজা খুলে দেয়। যাতে যাত্রীরা নেমে আসতে পারে।

“আমাদের দেশে রিয়েল হিরোরা স্বীকৃতি পায় না। আমি উপস্থিত থেকে দেখেছি ক্যাপ্টেন গোলাম শফি, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসীর মাহবুব ও পাঁচজন ক্রু; এই বাঙালি ছেলে-মেয়েরা অসম সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব, এদের যথাযথভাবে পুরস্কৃত করা উচিৎ।”

প্রতিমন্ত্রীর বিবৃতি

অধিবেশনে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। 

অভিযানের পর শাহ আমানত বিমানবন্দরে ছিনতাইকারী যুবকের লাশ ঘিরে কমান্ডোরা

তিনি বলেন, “বিজি ১৪৭ বিকাল ৫টা ১৩ মিনিটে ঢাকা থেকে যাত্রা করে বিমানটি পূর্ব সিডিউল অনুযায়ী বিকাল ৫টা ৪২ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে অবতরণ করে। অবতরণের পূর্বে বিমানের যাত্রী বেশে অস্ত্রধারী আকস্মিক যাত্রীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, বিমান উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ও চিৎকার করতে থাকে। বিমানের কর্তব্যরত ক্যাপ্টেন অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সাথে দুষ্কৃতকারীকে কথপোকথনে ব্যস্ত রেখে কালক্ষেপন করেন। ইতোমধ্যে বিমানের ক্রুদের সহায়তায় বিমানের সকল যাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনা হয়।

“ঘটনা চলাকালে বিমান বাহিনী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টরা ত্বরিত ব্যবস্থায় যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো ও র‌্যাবের একটি চৌকস দল বিমান বন্দরে অবস্থান নেন। কমান্ডোরা বিমানের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ঝটিকা আক্রমণে (ছিনতাইকারী) আহত হয়, পরে মৃত্যুবরণ করে।”

প্রতিমন্ত্রী জানান, বিমানটির ১৪৮ জন যাত্রী ও ৭ জন ক্রু সবাই নিরাপদে আছেন এবং বিমানটি অক্ষত রয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান মাহবুব আলী।