এখনও ‘পুরো ঘটনা বোঝার চেষ্টায়’ বিমান প্রতিমন্ত্রী

র‌্যাবের তালিকায় নাম থাকা একজন ‘অপরাধী’ কেমন করে একটি পিস্তল অথবা খেলনা পিস্তল নিয়ে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা এড়িয়ে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাতে পারল, সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 10:50 AM
Updated : 25 Feb 2019, 12:18 PM

সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এসে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন তারা।

বিমান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার মন্ত্রণালয়ের সচিব মহীবুল হক এবং সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান উপস্থিত ছিলেন এ সংবাদ সম্মেলনে। 

প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, “আজকেও আমরা পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। সাংবাদিকরাও পুরো বিষয়টি দেখেছেন।”

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিজি-১৪৭ রোববার বিকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজটির।

ওই অবস্থায় বিমানের পাইলট চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিমানটি চট্টগ্রামে অবতরণ করলে যাত্রীদের সবাইকে নামিয়ে আনা হয়।

প্রায় দুই ঘণ্টা টান টান উত্তেজনার পর আট মিনিটের কমান্ডো অভিযানে জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে। সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, পিস্তলধারী ওই যুবক নিহত হয়েছেন। 

সে সময় তারা বলেছিলেন, নিহত যুবক নিজেকে ‘মাহাদী’ বলে পরিচয় দিয়েছে, তার বয়স ২৬/২৭ বছর। আর চট্টগ্রামের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই যুবকের কাছে পাওয়া পিস্তলটি খেলনা।

এরপর সোমবার সকালে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান,নিহত যুবকের আঙুলের ছাপ তাদের ক্রিমিনাল ডেটাবেইজে থাকা এক অপরাধীর সঙ্গে মিলে গেছে।

সে অনুযায়ী তার নাম হল মো. পলাশ আহমেদ, বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে। ওই নামেই তিনি চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে বিমানে উঠেছিলেন। 

রোববারের ঘটনাপ্রবাহ জানাতে গিয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “কলিগদের থেকে জানলাম বিমান হাইজ্যাক হয়েছে। সাথে সাথে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের কথা বললাম।

“প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলে দেখলাম তিনি ঘটনাটি জানেন। কমান্ডো প্রসিড করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি (পিএম) সার্বক্ষণিক পুরো বিষয়টি মনিটর করেছেন। পরবর্তীতে আমরা জানলাম, সবাই নিরাপদে রয়েছে।”

প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, রোববারের ঘটনার পর শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার আয়োজন পর্যালোচনা করে দেখে কোনো ত্রুটি তারা পাননি।  

“এখানে এমন কোনো লিকেজ ছিল না বা এখনো নাই যে একজন যাত্রী এভাবে বিমানে যেতে পারে।”

তাহলে অস্ত্রটা ভেতরে গেল কীভাবে- এই প্রশ্নে বিমান সচিব মহীবুল হক বলেন, “সেটা অস্ত্র কিনা আমরা ওয়াকিবহাল না। খেলনা পিস্তল কিনা… যে কোনো কিছু হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।”

তিনি বলেন, “আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখেছি, অন্য দশটা যাত্রীর মত তাকেও (সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী) তল্লাশি করা হয়েছিল, তার কাঁধে একটা ব্যাগ ছিল। সেটা স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে গেছে, কিন্তু সেখানে কিছু দেখা যায়নি।”

বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে বলে জানান বিমান সচিব মহীবুল হক।

সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান বলেন, “বিমান থেকে সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর 'সো কলড' হাইজ্যাকার বিমানে একাই ছিল। আমরা সেদিন অনেক কিছুই শুনেছি। তদন্ত প্রতিবেদনে পুরো বিষয়টি বিস্তারিত জানা যাবে।”

ওই বিমানের এক যাত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই যাত্রীদের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে গুলি করার হুমকি দেন ওই ছিনতাইকারী। এক পর্যায়ে তিনি কয়েক রাউন্ড গুলিও করেন, তবে কারও গায়ে তা লাগেনি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান বলেন, “এয়ারক্রাফটে গুলি বিনিময় হলে তার চিহ্ন থাকত। আমরা কোনো চিহ্ন কোথাও পাইনি। খেলনা পিস্তলেও শব্দ হয়। যাত্রীরা শব্দ শোনার কথা বলেছে।”

ওই পিস্তল আসল নাকি নকল- তদন্ত না করে তা বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওই বিমানের চট্টগ্রামে নামার কথা ছিল, সে অনুযায়ীই নেমেছে; জরুরি অবতরণ করেনি।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়হীনতা রয়েছে কিনা- এই প্রশ্নে মাহবুব আলী বলেন, “কীভাবে যাত্রীরা যায় আপনারা দেখেছেন। কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া এই ধরনের ঘটনা থেকে আমরা উদ্ধার হয়েছি। সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা নেই।”

আরও খবর