চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ড: স্বজনদের খোঁজ চলছে এখনও

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পরও মর্গ আর ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে ভিড় করছেন অনেকে; কেউ ভাইয়ের খোঁজে, কেউ সন্তানের খোঁজে, কেউবা স্বজন-বন্ধুদের খোঁজে।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2019, 02:26 PM
Updated : 23 Feb 2019, 02:41 PM

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে এখনও ২১টি অগ্নিদগ্ধ লাশ রয়েছে; শনাক্ত না হওয়ায় এগুলো হস্তান্তর করা যায়নি। খালি চোখে শনাক্তকরণের অবস্থা না থাকায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হবে।

চুড়িহাট্টায় পাওয়া যায়  কেরানীগঞ্জের রাইতা আঁটির জরিনা বেগমকে। ভাই এনামুল হককে খুঁজেছেন তিনি। এনামুলের চকবাজারে স্টেশনারির দোকান ছিল।

জরিনা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেদিন রাতে সে বাসায় ফিরতাছিল। সঙ্গে তার দোকানের এক কর্মচারী ছিল। সে (কর্মচারী) কইছে, ভাই তারে রিকশা থিকা ধাক্কা দিছিল আগুন লাগার পর। তারপর সে (কর্মচারী) দৌড়াইল।”

তারপর থেকে ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ আর  চকবাজার এলাকায় ছুটোছুটি করছেন জরিনা।

“আমার ভাইরে আমার কাছে আইন্যা দেন। তার একটা তিন বছরের বাচ্চা ছেলে আছে ভাই। বাচ্চাডা আব্বা আব্বা করতাছে। তার কাছে তার বাপেরে ফিরায়া দেন।”

মদিনা গ্রুপের সিনিয়র ক্যাশ এক্সিকিউটিভ নাসরিন জাহান (৩২) ও তার স্বামী-সন্তানকে খুঁজছেন তাদের স্বজন-বন্ধুরা।

বুধবার অফিস থেকে বেরিয়ে স্বামী আহাম্মদ লিপু ও ছেলে আবতাহীকে নিয়ে রাতের খাবার কিনেছিলেন নাসরিন, তারপর ফিরছিলেন বাসায়। ওই সময়ই পড়েন অগ্নিকাণ্ড। তাদের তিনজনের খোঁজ এখনও মেলেনি।

সহকর্মী আশরাফ উজ জামান রূপম সেদিন রাত ১০টার দিকে রিকশায় তুলে দিয়েছিলেন নাসরিন ও তার পরিবারকে।

চুড়িহাট্টায় দাঁড়িয়ে রূপম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কী হাসিখুশি ছিল আপা, হাসিমুখে বিদায় নিয়ে গেল সেদিন।”

মো. সোহেল নামের এক বাসিন্দা সেদিন বলেছিলেন, “সড়কের একটি গাড়ি থেকে আরেকটি গাড়িতে আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে রিকশায় বসা অবস্থাতেই পুড়ে এক দম্পতি ও তাদের কোলের শিশু মারা গেছে।”

নাসরিন ও তার স্বজনরা সিআইডির কাছে তাদের ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন বলে জানান রূপম।

অগ্নিকাণ্ডের পর নিখোঁজ রফিক মিয়ার বাবা আলতাফ মিয়া সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের কর্মীদের কাছে ডিএনএ নমুনা দেন। তার মতো নমুনা সংগ্রহ করা হয় আরও কয়েকজনের কাছ থেকে।

চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ২১ জনের মরদেহ শনাক্তে জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ এলাকায় শনিবার দ্বিতীয় দিনে নিখোঁজদের স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের কর্মীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

নিহতদের স্বজনদের কেউ কেউও আসছেন চুড়িহাট্টায়; যে স্থানটি জড়িয়ে গেছে তাদের প্রিয়জনের চিরবিদায়ের সঙ্গে।   

ছেলে অপু রায়হান আর আরাফাতকে দাফন করে তাদের মা তারামনি বেগম এসেছিলেন শনিবার দুপুরে।

তারামনি বলেন, “বাবারে কেউ কি আছে আমার দুই ছেলের হাসি মুখটার কথা আমারে কইতে পারে। আমার দুই ছেলে এখানে ব্যবসা করত। কইত, আম্মা তোমার অভাব থাকব না। আমার দুই ছেলে আর নাই রে ....”

ওয়াহেদ ম্যানশনের উত্তরে ডব্লিউ বিল্ডিংয়ে টুপির পাইকারি দোকানে কাজ করতেন সাকিবুল হাসান, তাকেও শনিবার পাওয়া যায় চুড়িহাট্টায়।

সেদিন রাতে প্রাণ বাঁচাতে পাশের ভবন থেকে আরেক ভবনে লাফিয়ে বেঁচে যাওয়া সাকিব বলেন, “সেদিন রাইতে আমার মহাজন, আমাদের দোকানের বাকি সব স্টাফ বাড়ি গেছিল গা। আমি একলাই ছিলাম। আগুন লাগার পর আমি কোন দিক দিয়া জানি ছাদে উঠলাম। তারপর দুই বাড়ির ছাদ ডিঙ্গায়া নিচে নামলাম। পরদিন দেখলাম লাশ আর লাশ। আমার দুই হাতে কত লাশ বের করলাম।”

ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জনের লাশ উদ্ধারের কথা সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে।