চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডি হয়ত এড়ানো যেত, মানছেন কাদের

পুরান ঢাকার নিমতলীর ঘটনার পর আরও সতর্কভাবে নজরদারি চালানো হলে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে বিপুল প্রাণহানি হয়ত এড়ানো যেত, সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও তা মানছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2019, 09:38 AM
Updated : 22 Feb 2019, 09:38 AM

তিনি বলেছেন, “কোনো কিছু দেশে ঘটলে যেহেতু সরকার ক্ষমতায় আছে, দায় তো সরকার এড়াতে পারে না। এটা তো সত্য কথা। কিন্তু জনসাধারণ যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত, তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার। কারণ তাদের এখানে জীবিকার চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি। সেখানে সচেতনতাও একটা ব্যপার ছিল, সতর্কতার ব্যপার ছিল।”

পাশাপাশি যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়ায় এর বিকল্প কী হতে পারে, তা ভেবে দেখার কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। 

চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দেখতে শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান কাদের। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে ওই ঘটনা নিয়ে কথা বলেন।

বুধবার রাতে একটি পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ের পাঁচটি ভবনে আগুন ধরে যায়। সেসব ভবন এবং আশপাশের দোকানে থাকা রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-পারফিউমের গুদাম ওই আগুনকে ভয়াবহ মাত্রা দেয় বলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা।

ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায় সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে জীবন্ত দগ্ধ হন অন্তত ৬৭ জন।

আহতদের মধ্যে নয়জন ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

কাল বিলম্ব না করে পুরান ঢাকার সব রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “যেটা হয়ে গেছে এবং যারা চলে গেছে, ক্ষয়ক্ষতি যা হয়ে গেছে সেটা তো আর ফেরত দেওয়া যাবে না। এখন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”

সেটা আরও আগেই করা উচিত ছিল স্বীকার করে তিনি বলেন, “চেষ্ট ছিল। কিন্তু এটা এমন একটা ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকা, এখানের কেমিকেল গোডাউনগুলো আবার ভেতরে ভেতরে এসে জায়গা নিয়ে ফেলেছে। এটা একটু মনিটরিং করলে হয়তো এড়ানো যেত।”

মন্ত্রী বলেন, ভুল সংশোধন করে নতুন করে পথ চালার বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী ‘যত দ্রুত সম্ভব’ রাসায়নিকের গুদাম সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছেন।

“আশা করি মেয়র সাহেব কাল বিলম্ব না করে পদক্ষেপ নেবেন। এখানে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবার পরিজনের অনেকে সামর্থ্যবান ব্যাক্তি। টাকা পয়সা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে না। তারপরেও এ ব্যাপারে সরকার মানবিক, আর্থিক সাহায্য, পুনর্বাসন- এ ব্যাপারে যা যা করনীয়, প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নিয়েছেন।”

কবে নাগাদ রাসায়নিকের গুদাম বন্ধ হতে পারে এবং কোন কোন রাসায়নিকের গুদাম বন্ধ হচ্ছে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখানে কেমিকেলের যে গোডাউনগুলো আছে, অবিলম্বে সরিয়ে নিতে হবে। এখানে রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার গাফিলতি আরও বড় ক্ষতি ডেকে আনবে। দিন ক্ষণ এভাবে বলা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে দিন ক্ষণের কী আছে!“

সরকার এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, “সরকার নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় না, সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু গোডাউন সরিয়েও নিয়েছে। পরে গোপনে এসে অনেকে জেঁকে বসেছে। এটার ক্লোজ মনিটরিংটা হলে হয়তবা এমনটা হত না, সেটা ঠিক আছে।”

চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের বিরুদ্ধে ‘দায়িত্বহীন আচরণের’ যে অভিযোগ এনেছেন, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে কাদের বলেন, “বিএনপি মহাসচিব কি বলছেন সেটা না বলে আমি একটা কথা বলতে চাই, যে বিষয়টা হয়ে গেছে এই বিষযটা নিয়ে, এই দুর্ঘটনা নিয়ে প্রত্যেকেরই দায় দায়িত্ব আছে, নাগরিক হিসেবে সবাইকে পজেটিভ কিছু করতে বলব।

“রাজনৈতিক দল হিসেবে, এতগুলো লোকের প্রানহাণি… মানুষের দুঃখ আর দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে আমাদের কারও রাজনীতি করা উচিত না। এ বিষয়টি আর যাই করুন, রাজনীতিতে নিয়ে আসবেন না।”

দর্শনার্থীদের হাসপাতালে ভিড় না করার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি একটা অনুরোধ করব, যারা বার্ন ইউনিটে ভর্তি অছেন, এখানে যদি দর্শনার্থী বাড়তে থাকে, তাহলে রোগীর জন্য খারাপ হবে। ডাক্তাররা বার বার বলছে আপনজনকে বাঁচাতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। দর্শনার্থী বাড়ানো যাবে না।”