কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে পুড়ে যাওয়া নিজের দোকান লামিয়া স্টোরের সামনে হাজির হন লিটন।
জীবিত লিটনকে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেন পরিচিতজনরা। কান্নাধরা গলায় লিটনকে তারা একটা কথাই বলেন, “তুই বেঁচে আছিস…!”
চুড়িহাট্টা মোড়ের ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে লিটন শোনান মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার কথা।
হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের পশ্চিম পাশে সড়কের ওপারে নিচতলায় লিটনের মুদিন দোকান। বুধবার রাতে যখন আগুন লাগে তখন দোকানেই ছিলেন তিনি।
লিটন বলেন, “দোকানে আমি একাই ছিলাম। একজন খরিদ্দার ছিল। তাকে কী একটা মাল দিয়ে টাকা নিয়ে আমার মানিব্যাগ থেকে ভাংতিও দিলাম।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে যেতে দেখেন লিটন।
“চোখের পলকে আগুন আর আগুন। বেশি ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায়… যেখানে গোডাউন।”
লিটন বলেন, “কিছু না ভেবেই দিলাম দৌড়। খুব যানজট। ধাক্কা খেলাম একটি ব্যাটারির রিকশার সাথে। তারপর দৌঁড়ে পালিয়ে বাঁচলাম।”
চুড়িহাট্টা মোড় থেকে বের হয়ে সোজা কামরাঙ্গীচরের আলীনগরে নিজের বাসায় চলে যান লিটন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “দোকানে আমার মোবাইল ফোন ছিল। মোবাইল ফোন, দোকানের মালামাল ও টাকা-পয়সা সব পুড়ে যায়। তাই কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি; আর আমিও।”
কোত্থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়, তা এখনও স্পষ্ট হওয়া না গেলেও গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, ওই মোড়ে ভিড়ের মধ্যে থাকা একটি পিকআপে থাকা গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরিত হওয়ার পর প্রথমে রাস্তায় থাকা যানবাহনে এবং পরে আশপাশের ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
লিটন বলেন, “আগুন কোথা থেকে লেগেছে তা বলা মুশকিল। তবে শব্দটি হোটেলের সামনে থেকে এসেছে আর আগুনের তীব্রতা দেখেছি দোতলার গোডাউনে।”
কয়েক বছরের চেষ্টায় দোকানটি দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। কয়েক সেকেন্ডের বিস্ফোরণে লাগা আগুনে কয়েক ঘণ্টায় পুড়ে গেছে সেই দোকান। মারা গেছেন পাশের মদিনা ডেন্টালের চিকিৎসকও।
‘মৃত্যুপুরিতে’ আবেগতাড়িত লিটন বলেন, “মুহূর্তের আগুনে দোকান শেষ হলেও দুঃখ নাই, কারণ মৃত্যুর পথ থেকে বেঁচে এসেছি।”