বাংলাদেশকে বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র ‘ভাবছে’ আমিরাত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের নতুন গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। পাশাপাশি শ্রম বাজার নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহকেও গুরুত্বের সঙ্গে তারা বিবেচনা করছে।

রিয়াজুল বাশার আবু ধাবি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2019, 05:57 PM
Updated : 18 Feb 2019, 06:35 PM

সোমবার আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্সের বৈঠকের পর এমন খবর দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

দুপুরে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে বৈঠকের আগে সকালে আবু ধাবি এক্সিজিবশন সেন্টারে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হয় আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল মাকতুমের।

বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এক সঙ্গে এসে আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “বাংলাদেশকে ইউএই বিনিয়োগের একটা বড় নতুন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে- একথা দুবাইয়ের শাসক বারবার বলেছেন। একইসাথে বলেছেন, জনশক্তির বিষয়টি উনারা ওপনেলি কনসিডার করবেন।”

দুপুরে রাজকীয় প্রাসাদে আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

ছবি: সাইফুল ইসলাম কল্লোল

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “উনি (ক্রাউন প্রিন্স) বললেন, লেবার মার্কেটের বিষয়টা উনি দেখবেন, বিনিয়োগের বিষয়টা উনি দেখবেন।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়েই যে একটা গুরুত্ব পাবেন, সেটা উনি (নাহিয়ান) বলেছেন।”

ক্রাউন প্রিন্স বাংলাদেশ সফরে আসেবেন বলেও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, দুবাইয়ের শাসক এবং আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর পরই শ্রমবাজার নিয়ে মঙ্গলবার সকালেই দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচনা হবে।

“এটাও খুব আনইউজুয়াল। সচরাচর প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় ফরেন অফিস কনসালটেশন হয় না।”

ছবি: পিআইডি

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে রোববার আবু ধাবি সফরে আসেন শেখ হাসিনা।

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটাই তার প্রথম বিদেশ সফর।

রোববার সকালে আবু ধাবিতে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী ও নেভাল ডিফেন্স অ্যান্ড মেরিটাইম সিকিউরিটি প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার পর দুপুরের পর ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

রোববার বিকালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক অঞ্চল বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

আমিরাতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তার লেখা ‘মাই ড্রিম’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘আমার স্বপ্ন’ রশিদ আল মাকতুমের হাতে তুলে দেন শেখ হাসিনা।

ফাতিমা বিনতে মুবারকের সঙ্গে বৈঠক

দুবাইয়ের শাসকের সঙ্গে বৈঠকের পর আবু ধাবির বাহার প্যালেসে ইউএই’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের স্ত্রী শেখা ফাতিমা বিনতে মুবারক আল কেতবির সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ওখানে লম্বা বৈঠক হয়েছে। খুবই উঞ্চ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। ওনাদের তরফ থেকে পরিবারের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উনি বাংলাদেশের নারী শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিয়ে জানতে চেয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশে নারীরা যে এখন ব্যবসা করছে এবং এনজিওতে কাজ করছেন- এটা কীভাবে হল ও কীভাবে টেকসই হয়েছে এগুলো উনি জানতে চেয়েছেন।

“আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে ব্যাখ্যা করেছেন।”

শহীদুল হক বলেন, “উনি (ফাতিমা) নিজেও এদেশে নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি মনে করেন যে, এখানে বাংলাদেশের কাছ থেকে দুবাইয়ের মহিলাদের শেখার অনেক কিছু আছে যে, কীভাবে ইসলামের মধ্যে থেকে কর্মসংস্থান করা যায়।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘খুব স্নেহের সঙ্গে আপ্যায়ন করেছেন’ বলেও জানান তিনি।

মজলিশে শেখ হাসিনা

রয়্যাল প্যালেসে ক্রাউন প্রিন্স নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর আবু ধাবি সফরের সময় ইউএই’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং আবুধাবির শাসক প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি প্রধানমন্ত্রী তাকে উপহার দেন।

ছবি: ফোকাস বাংলা

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে উনি মজলিশে নিয়ে যান। মজলিশ সপ্তাহে একদিন বসে। সচরাচর মজলিশে উনারা পরিচয় করিয়ে দেন। অতিথি চলে গেলে উনারা বৈঠক করতে থাকেন। কিন্তু উনি প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, আপনি আমার পাশেই বসেন।

“বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বিশেষ সম্মান দিয়েছেন।”

বিনিয়োগ ও শ্রমবাজার ছাড়াও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স আলোচনা করেছেন বলে তিনি জানান।

“খুবই উঞ্চ একটা সংবর্ধনা ছিল।”

বৈঠকগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।