সংসদে শাজাহান খানের প্রতিবাদ-কৈফিয়ৎ

সংসদে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে নিজের কৈফিয়ৎ তুলে ধরেছেন শাজাহান খান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2019, 03:45 PM
Updated : 18 Feb 2019, 03:45 PM

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় সরকার শাজাহান খানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের পর তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফখরুল ইমাম।

সোমবার প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেছিলেন, “বদিকে (আবদুর রহমান বদি) দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আর শাহজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?

“গরু-ছাগল চিনলে লাইসেন্স দেওয়া যাবে- শাজাহান খানের এই মন্তব্যে সারাদেশে তোলপাড় হয়েছিল। উনার এক হাসি ওই সময় দেশে কী পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তাকে দিয়ে সরকারের কতখানি কমিটমেন্ট রক্ষা হবে?”

বিরোধী দলের এই সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পর সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ ধারায় ‘ব্যক্তিগত কৈফিয়ত’ দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, যিনি গত সরকারে নৌমন্ত্রী ছিলেন।

শাজাহান খান বলেন, “সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম মাদক ব্যবসা ও দুর্ঘটনাকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে আমার সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আমি এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।”

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য তার ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাজহান খান। পাশাপাশি ফখরুল ইমামের বক্তব্য অধিবেশনের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

এই আলোচনার সূত্র ধরে শাজাহান খান বলেন, “২০০৯ সালে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ আমার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন- ‘যার হাতে সড়ক পরিবহন জিম্মি তাকে দেওয়া হয়েছে নৌপরিবহনের দায়িত্ব’।

“সেই ঘটনার ৪ বছর পরে এক টক শো’তে জানতে চেয়েছিলাম, আপনার কী সেই ভুল ভেঙেছে? সেদিন তিনি কথাগুলোর উত্তর দেননি। ফখরুল ইমামকেও এই সংসদে দাঁড়িয়ে বলতে হবে তার বক্তব্য ভুল, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক ছিল।”

সড়ক পরিবন শ্রমিক নেতা হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “১৯৭২ সাল থেকে আমি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি শ্রমিক রাজনীতি করি, ট্রেড ইউনিয়ন করি। শ্রমিকদের পক্ষে কথা বললে অনেকের গায়ে লাগতে পারে।

“২০১৩/১৪ সালে গার্মেন্টে যখন জ্বালাও-পোড়াও ও ভাংচুর ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি সমস্ত শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে ট্রেড ইউনিয়ন ও বেতন বাড়ানোর কথা বলেছিলাম। তিনি সেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। শ্রমিকদের আন্দোলন হতেই পারে, কিন্তু সেই ২০১৩ সালের পরে একটি গার্মেন্টসও ভাংচুর হয়নি, জ্বালাও পোড়াও হয়নি।”

শাজাহান খান বলেন, “দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে, এটা বলতে চাইলে তা হবে বিভ্রান্তমূলক ধারণা। দুনিয়ার কোনো দেশ নেই যেখানে কম-বেশি দুর্ঘটনা না ঘটে। বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ একই সাথে ১৯২টি দেশের ওপর দুর্ঘটনার প্রতিবেদন করেছে। ২০১১ সালে ১৯২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯০তম এবং দুর্ঘটনার হার ছিলো ১৬ দশমিক ৫। আর ২০১৪ সালে সেই রেট কমে এসেছে ১২ দশমিক ৬ এ এবং আমাদের অবস্থান ১০৯।”

বেশ কয়েকটি বছরের দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, “২০০২ সালে দেশে ৪ হাজার ৯১৮টি দুর্ঘটনা ছিলো; এতে নিহত হয় তিন হাজার ৩৯৯ জন। ২০১৫ সালে দুই হাজার ৩৯৪টি দুর্ঘটনা ও দুই হাজার ৩৭৬ জন নিহত হয়েছে। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির শাসনামলে ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ছিল না। শেখ হাসিনার আমলে ১৯৭টি ট্রেইনিং ইন্সস্টিটিউ হয়েছে। আগের মতো টার্মিনাল দখল, মানুষ হত্যার অবস্থা এখন নেই।”

বর্তমান সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে দুর্ঘটনা কমে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, “ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ২০১২ সালে দুর্ঘটনা ছিল ৫১৪টি। ২০১৩ সালে তা কমে হয় ২১২টি। বাঁকগুলো সোজা করা এবং ফোর লেন করার জন্য এটা কমে এসেছে।

“দুর্ঘটনা আরও কমাতে হবে। সেই জন্য আমাদের দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে। একাধিক মন্ত্রীসহ শতাধিক ব্যক্তির উপস্থিতিতে আমাকে এই দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে। সেখানে তো কেউ বিরোধিতা করেননি।”

দুর্ঘটনার জন্য শুধু বাসচালককে দায়ী না করার আহ্বান জানিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের নেতা শাজহান খান বলেন, “পাটুরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় সমাজকল্যাণ সচিব নিহত হয়েছিলেন, সেই দুর্ঘটনায় চালক দায়ী নন।

“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বেল্ট পরতে হবে। তারেক মাসুদ নিহতের ঘটনায় তার স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছিলেন, যারা নিহত হয়েছিলেন কেউ বেল্ট পরেননি। তাহলে এই দায়িত্বটা কার ওপর বর্তাবে? যে গাড়িটি তারেক মাসুদকে বহন করছিল, তিনি (তার চালক) দীর্ঘ সময় গাড়ি চালিয়েছিলেন। সারারাত গাড়ি চালিয়েছেন, দিনের বেলায় তিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন। এই ধরনের বহু রিপোর্ট আমার কাছে রয়েছে।”

এই সব বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই সড়কে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নেব। সেই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দুর্ঘটনার হার আরও কমে যাবে বলে আশা করি।”