দুর্নীতি রুখতে নার্সারি থেকেই ‘আদর্শের শিক্ষা’ চান আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মনে করেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য মানুষের মনে ‘ইতিবাচক পরিবর্তন’ আনতে হবে, আর সেজন্য নার্সারি থেকেই পাঠ্যবইয়ে ‘আদর্শের কথা’ রাখতে চান তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2019, 03:55 PM
Updated : 17 Feb 2019, 03:55 PM

জাতীয় প্রেসক্লাবে রোববার দুর্নীতিবিরোধী এক সেমিনারে তিনি বলেন, পাঠ্যসূচি তৈরি করতে হবে এমনভাবে, যাতে শৈশব থেকেই ‘দুর্নীতিবিরোধী মূল্যবোধ’ তৈরি করা সম্ভব হয়।

“সদা সত্য কথা বলিব- আমরা ছোট বেলায় আদর্শলিপি থেকে শিখেছি। এটা কিন্তু আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করে দেয়। আমাদের শিশুদের যদি এইসব ভ্যালুজ সম্পর্কে পড়ানো হয়, তাহলে তারা বড় হয়ে দুর্নীতি করবে না।”

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনমন্ত্রী বলেন, “এসব বিষয় সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করব। আমি চেষ্টা করব নার্সারি থেকে আমাদের পাঠ্যবইয়ে এ রকম আদর্শের কথা যেন লেখা হয়। আদর্শ না মানলে তার পরিণাম কী হয়, সে সম্পর্কে বলা থাকবে।”

আনিসুল হকের ভাষায়, শুধু আইন দিয়ে দুর্নীতি দমন করা যায় না। দুর্নীতি করলে আইন দিয়ে শাস্তি দেওয়া যায়। তার মানে হল, দুর্নীতি আগে করতে হবে, তারপর আইনের প্রয়োগ।

“সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে থাকা দুর্নীতি দূর করতে সিলেবাস পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”

পাঠ্যবইয়ের শিক্ষার পাশাপাশি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত করতে দুদককে পরামর্শ দেন আইনমন্ত্রী।

“শুধু জ্ঞান দিয়ে কাজ হবে না, দুর্নীতিবিরোধী কাজে মানুষকে যুক্ত করতে হবে। নয়তো কোনো কাজেই সাফল্য আসবে না। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কৌশলী হতে হবে।”

আনিসুল হকের মতে, রাষ্ট্রের সকল স্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে দুর্নীতি কমবে। পাশাপাশি সবক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

“সবকিছু ডিজিটাল হলে দুর্নীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমতে থাকবে। তাই সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো যাতে তাদের সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে আনে, সে ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনেরও দৃষ্টি দেওয়া উচিত।”

তথ্য অধিকার আইনও দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে দাবি করে আনিসুল হক বলেন, এ আইন জনগণকে ‘ক্ষমতায়িত’ করেছে; এ আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।

দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজার প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, “তিনি এতিমদের টাকা নিয়ে দুর্নীতি করেছেন। আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে ১০ বছর সাজা বেশি হয়নি। তার থেকেও বড় কথা হল, এটা প্রমাণ হয়েছে যে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী ব্যক্তিও আইনেরর ঊর্ধ্বে নন।”

দুর্নীতি দূর করতে সরকার এখন ‘মূলে হাত দিয়েছে’ মন্তব্য করে আনিসুল হক বলেন, “এদেশে আর দুর্নীতি হতে দেওয়া যায় না। কারণ দুর্নীতি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে আঘাত করছে। দুর্নীতি দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করছে। দুর্নীতি সামাজিক অবক্ষয় ও সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। দুর্নীতির কারণে আদর্শ, নৈতিকতা পেশা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই যে কোনো মূল্যে আমাদের দুর্নীতি দমন করতে হবে।”

বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম ‘দুর্নীতি বিরোধী অভিযান ও নেতৃত্বের সাফল্য’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সংগঠনটির আহ্বায়ক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশ্বজিৎ ঘোষ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল একে মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, মিল্টন বিশ্বাস ও অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সেমিনারে বক্তব্য দেন।