দুর্নীতিবাজদের ‘লোভের জিভ কেটে’ ফেলা হবে: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতিবাজদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2019, 12:22 PM
Updated : 17 Feb 2019, 12:22 PM

তিনি বলেছেন, “দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে এবং আমরা লোভের জিহ্বা কেটে দিতে চাই। সেটা আমরা কাটা শুরু করেছি।”

রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে 'দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌশলপত্র-২০১৯' নিয়ে পরামর্শ গ্রহণে দেশের ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
দুর্নীতিবাজদের ‘শাস্তি হয় না’ বলে ধারণাটি ভ্রান্ত বলে মন্তব্য করেন ইকবাল মাহমুদ।

“আপনার বলছেন শাস্তি হয় না, তথ্যটি সঠিক নয়, এবারও ৬৩ শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। আমরা হয়ত কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দুর্নীতি কমাতে পরিনি। তবে এই ৬৩ শতাংশ সাজা কিন্তু এমনিতে হয়নি, এটি আমাদের সকলের ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল।”

বরাবরের মতো এবারও দুর্নীতি দমনে দুদককে সহযোগিতা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান ইকবাল মাহমুদ।

তিনি বলেন, “লজ্জা এখন কেউ পায় না। এক সময় বলা হত অর্থ অনর্থের মূল। কিন্তু সব সময় অর্থ অনর্থের মূল নয়। অনেক সময় অর্থই অর্থের মূল। অর্থ মানেই পাওয়ার বা ক্ষমতা। মানুষ অর্থের পেছনে ছুটে। এটাতে এখন লজ্জা পায় না তারা। আমরা লজ্জা ফেরানোর চেষ্টা করছি।”

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আপনারাই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সবচেয়ে যোগ্য এবং মেধাবী সন্তান। তাই কমিশনের কর্মকৌশল প্রণয়নে সর্বপ্রথম আপনাদের সাথেই আলোচনা করা হচ্ছে। তাই আমরা আপনাদের কাছ থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে নতুন ধারণা, সৃজনশীল আইডিয়া এবং সর্বোপরি কর্মপন্থা গ্রহণ করতে চাই।"

রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা এখন বেড়েছে দাবি করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, "একদিন বা এক বছরেই দুর্নীতি থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। এটি একটি ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় দুর্নীতি অবশ্যই সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।"

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী তামান্না রিফাত আরা বলেন, "দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই, যার সাহায্যে দুর্নীতি করার সুযোগ বন্ধ করা যায়। দুদকে এমন পদ্ধতি বের করতে হবে যাতে করে কেউ দুর্নীতি করতে কোনো সুযোগই না পায়।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইদুর রহমান বলেন, "অপরাধীদের দ্রুত বিচার করা না গেলে অপরাধ দমন করা সম্ভব নয়।"
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন তিনি।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিরা রহমান বলেন, "খাদ্য ভেজাল দুর্নীতি। ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এ দুর্নীতি করছে এবং তারাই নিরাপদ খাদ্যের জন্য হুমকি।"

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. ফারুক হোসেন বলেন, "কৃষি ভর্তুকির অর্থ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নিকট পৌঁছানোর আগেই বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি সংঘটিত হয়। এসব বিষয় শক্ত হাতে মনিটর করতে হবে।"

আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান মিয়া বলেন, "আমরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি কি না এটি বড় প্রশ্ন।"
দুর্নীতিকে একটি 'চেইন অপরাধ' হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, "নিচের দিকে কর্মরত কর্মকর্তারা জানেন তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও দুর্নীতিপরায়ণ। তাই দুর্নীতি করলে কিছু হবে না।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শম্পা গুহ বলেন, পদ্ধতিগত কারণেই দুর্নীতি অপ্রতিরোধ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামস আসিফ চৌধুী বলেন, "দুদক স্কুল পর্যায়ে সততা সংঘ গঠন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ধরনের কোনো সংগঠন নেই।"

দুদককে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দুর্নীতি বিরোধী ক্লাব গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা মহাজন বলেন, "আইনি সংস্কার এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং তাৎক্ষণিক ফল চাই।"

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী টোটন  চন্দ্র দেব নাথ বলেন, দুর্নীতি যারা করেন তাদেরকে ভয় ও লজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতি দমনে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি দুইটি পর্যায়ে বেশি হয়। একটি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপরটি ব্যক্তি পর্যায়ে।

“প্রাতিষ্ঠানিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দুর্নীতি অবশ্যই কমে আসবে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে কিন্তু রোগীদের দেওয়া হচ্ছে না, শুধু মনিটরিংয়ের অভাবেই রোগীর কাছে ওষুধ পৌঁছাচ্ছে না।”

দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, "শিক্ষার্থীরা আদর্শিক অবস্থানে রয়েছেন। সুনীতি, সদাচার এবং দেশপ্রেমই তাদের আদর্শ। তাদের কোনো ব্যক্তি স্বার্থ কিংবা গোষ্ঠী স্বার্থ নেই। পদ্ধতিগত সংস্কারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সিটিজেন চার্টার, ই-টেন্ডারিং পদ্ধতি, ক্রয় নীতিমালা সবই পদ্ধতিগত সংস্কারের অংশ।"

মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) সারোয়ার মাহমুদ।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী, মহাপরিচালক (তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।