‘অর্থ সংকটে’ আগ্রহ হারাচ্ছেন লিটল ম্যাগ প্রকাশকরা

অর্থ সংকুলান ও মানসম্মত লেখার অভাবে ক্রমেই আবেদন হারাতে বসেছে সাহিত্যের ছোট কাগজ লিটল ম্যাগ।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2019, 08:21 PM
Updated : 16 Feb 2019, 08:24 PM

গাঁটের পয়সা খরচ করে একদল সাহিত্যপ্রেমী নিয়মিতভবে লিটল ম্যাগ প্রকাশ করে গেলেও এবার সেই ধারাবাহিকতায় ভাঁটা পড়েছে বলে কয়েকজন প্রকাশক জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, লিটল ম্যাগে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক প্রকাশক হারিয়ে গেছেন। যারা টিকে আছেন তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার ষোড়শতম দিন শনিবার বাংলা একাডেমির বহেরা গাছকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ‘লিটল ম্যাগ কর্নারে’ কথা হয় ‘স্বপ্লিল’- এর প্রকাশক সাঈফুল সাঈফের সঙ্গে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  বলেন, “ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে যে খরচ হয়েছে, তা বিক্রিতে উঠে আসছে না। বিজ্ঞাপন নেই, নিজের পয়সা খরচ করে লিটল ম্যাগ প্রকাশ করতে হয়।

“তারপর আসে মানসম্মত লেখার বিষয়। প্রতিষ্ঠিত লেখকরা মোটা অঙ্কের রয়্যালিটি দাবি করছেন। আমরা তো সে অবস্থায় নেই।”

লিটল ম্যাগ প্রকাশনা ছেড়ে অনেকেই এখন পূর্ণোদ্যমে প্রকাশনা ব্যবসা শুরু করেছেন জানিয়ে সাঈফ বলেন, “ব্যবসায়িক চিন্তা করিনি কখনো। কিন্তু এবার ভাবছি প্রকাশনা যদি করি তবে তা ব্যবসায়িকভাবেই করব।”

প্রকাশকদের আর্থিক সংকটের কারণ হিসেবে লিটল ম্যাগের ক্রেতা কমে যাওয়ার কথা বলেছেন করাতকলের প্রকাশক কামরুল হুদা পথিক।

তিনি বলেন, “লিটল ম্যাগে মানসম্মত লেখা থাকলেও তার গ্রাহক কমে যাওয়ায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।”

পথিক মনে করেন, লিটল ম্যাগ প্রকাশনা অনেকটা ‘দ্রোহের মতো’।

“আমরা সেই দ্রোহটা করে যাচ্ছি। কিন্তু লিটল ম্যাগের গ্রাহক কমছে। লিটল ম্যাগের লেখাগুলো গ্রাহকরা গ্রহণ করতে পারছে না”

লিটল ম্যাগ চত্বরে এসে অনেকেই বই দেখেই ফিরে যাচ্ছেন জানিয়ে এজন্য ‘মানহীন’ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেছেন কবি-এর সম্পাদক আনোয়ার কামাল।

তিনি বলেন, “লিটল ম্যাগ চত্বরে এমন কিছু প্রকাশনাকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, যাদের আসলে নিজস্ব কোনো লিটল ম্যাগ নেই। নামকাওয়াস্তে এসব প্রকাশনীতে মানহীন বই দেখে পাঠক ফিরে যাচ্ছেন। লিটল ম্যাগের বেহাল দশার পেছনে এগুলোর দায়ও কম নয়।”

লিটল ম্যাগ প্রকাশে লেখা নিয়েও বড় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে জানিয়ে কামাল বলেন, “বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করতে গেলে প্রায়ই সমস্যায় পড়ি। ধরাবাঁধা বিষয়ে লিখতে চান লেখকরা। অধিকাংশ লেখা আসে মানহীন।” 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকজন উঠতি লেখকের জন্য লিটল ম্যাগ ‘বড় প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করেন তিনি।

“বেশকজন তরুণ লেখক ভীষণ ভালো লিখছেন। লিটল ম্যাগে তাদের সাহিত্যমান ভালো হচ্ছে বলে পরে বড় প্রকাশনী থেকেও তাদের বই বের হচ্ছে।”

বরাবরই নবীন কবি ও লেখকদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ করে দিয়ে আসছে লিটল ম্যাগাজিন। বর্তমান সময়ের জ্যেষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকদের অনেকেরই লেখালেখির শুরু হয়েছিল লিটল ম্যাগ দিয়ে।

যথাযথ বিনিয়োগের অভাবে মফস্বল থেকে লিটল ম্যাগ হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে মনে করেন যশোর থেকে প্রকাশিত ‘জংশন’- এর সম্পাদক নাভিল মানদার।

তিনি বলেন, “লিটল ম্যাগে তরুণ সাহিত্যিকদের বিকাশের সম্ভাবনা থাকলেও বাজেট এখন অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজেট নেই বলে আমাদের প্রকাশনাও অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে।”

১৭টি প্রকাশনাকে কারণ দর্শাও নোটিশ

গ্রন্থমেলার নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে ১৭টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলা একাডেমি।

এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো হল - ব্রাদার্স পাবলিকেশন্স, পালক, প্রসিদ্ধ পাবলিশার্স, শব্দশিল্প, প্রজ্বলন প্রকাশ, বই বাজার প্রকাশনী, নিহাল পাবলিকেশন্স, জ্ঞান বিতান প্রকাশনী, জয় বাংলা একাডেমি, জনতা প্রকাশ, জোনাকী প্রকাশনী, জোৎস্না পাবলিশার্স, চিরদিন প্রকাশনী, আল আমিন প্রকাশন, পিয়াল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, রাবেয়া বুক হাউজ ও দোয়েল প্রকাশনী।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্টল বিন্যাসে অনিয়ম, অন্য প্রকাশনীর বই এনে বিক্রি করা, অনুমতি ছাড়াই অনুবাদ ছাপানো, গাইডবই বিক্রয়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।”

মূল মঞ্চে চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে স্মরণ

শনিবার বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর: শ্রদ্ধাঞ্জলী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিল্প সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ।

শিল্পী হাশেম খানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ফরিদা জামান, নিসার হোসেন ও মলয় বালা।

প্রাবন্ধিক বলেন, “শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর পঞ্চাশের দশকের নিরীক্ষানিষ্ঠ শিল্পীদের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যের বৈশিষ্ট্যে সুচিহ্নিত। তার জীবন-পাঠ ও শিল্পকৃতির বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন সময়ের আরও আবর্তনে স্পষ্টতা পাবে।অথচ তার শিল্প নিয়ে আজও তেমন গবেষণা হয়নি। যদিও তিনি পঞ্চাশের প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক একক প্রদর্শনী করেছেন।”

মেলার ‘লেখক বলছি মঞ্চ’-এ নিজেদের নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে আলোচনা করেন আসাদ মান্নান, শাকুর মজিদ, পাপীয়া জেরিন, আবদুল্লাহ আল ইমরান ও মাহফুজ রিপন।

এদিন মেলায় ২০৬টি নতুন বই এসেছে বলে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে।