ইয়াবা: আত্মসমর্পণে বদির ভাই-বেয়াইসহ আট স্বজন

কক্সবাজারে আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা চোরাকারবারিদের মধ্যে ওই এলাকার সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির চার ভাইসহ আটজন স্বজন রয়েছেন।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2019, 02:17 PM
Updated : 16 Feb 2019, 02:53 PM

অন্য চারজনের মধ্যে একজন তার ফুপাত ভাই, একজন খালাত ভাই, একজন ভাগনে ও একজন বেয়াই।

শনিবার কক্সবাজারের টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা কারবারি।

আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ২৪ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় মাদক চোরাচালানের ‘গডফাদার’ হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান বদির এই আট ভাই-বেয়াইও ছিলেন।

এরা হলেন- বদির ভাই আব্দুর শুক্কুর (৩৩), শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক (২৯), আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন (৪১) ও ফয়সাল রহমান (২৯), ‍ফুপাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল (৩৫), খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি (৪৮), ভাগনে মো. সাহেদ রহমান নিপু (৩৩) এবং বেয়াই সাহেদ কামাল ওরফে সাহেদ (৩২)।

ইয়াবা চোরাকারবারিদের তালিকায় আবদুর রহমান বদির নাম এলেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি, অনুষ্ঠানেও ছিলেন না তিনি

আখতার কামাল নামে বদির আরেক বেয়াইয়েরও নাম এসেছিল ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায়। গত বছর মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন তিনি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় ইয়াবা পাচারের ‘হোতা’ হিসেবে কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির নামও এসেছিল।

গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা মাদক কারবারিদের তালিকায় কক্সবাজারের এক হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে শীর্ষ ‘ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৭৩ জনকে। সর্বশেষ তালিকাসহ আগের সব তালিকায় ‘শীর্ষ গডফাদার’ হিসেবে আব্দুর রহমান বদির নাম ১ নম্বরে রয়েছে।

তবে এদিন আত্মসমর্পণ করেননি আব্দুর রহমান বদি। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানেও ছিলেন না তিনি। তার স্ত্রী কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বর্তমান সাংসদ শাহীন আক্তার চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসা নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছিলেন শাহিন আকতার, তখন তার পাশে ছিলেন তার স্বামী আব্দুর রহমান বদি

গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েই নিজের এলাকায় ইয়াবার কারবার নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছিলেন শাহীন আক্তার। পরে নিজেদের বাড়িতে বৈঠক ডেকে ‘ইয়াবা ব্যবসায়ীদের’ আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন শাহীন ও তার স্বামী বদি।

নিজেকে নির্দোষ দাবি করা আব্দুর রহমান বদি গত ১০ জানুয়ারির ওই সভায় ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত জানাতে পাঁচ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এর মাসখানেক পর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেন শতাধিক মাদক কারবারি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা কারবারি

প্রশাসনিক তৎপরতায় শুরু হওয়া আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় সম্মতি জানিয়ে গত এক মাস ধরে কক্সবাজারের ১০২ জন ইয়াবা চোরাকারবারি নিজেরা নিরাপদ হেফাজতে আসেন। তারা অপরাধ স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে কক্সবাজারের পুলিশ জানিয়েছে।

বদির বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, “ইয়াবা পাচার নিয়ে সাবেক সাংসদ বদির বিরুদ্ধে নানা আলোচনা ও সমালোচনার কারণে বিতর্ক এড়াতে তাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ইয়াবা বিস্তার রোধে সরকার সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করে যাবে।”

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য আব্দুর রহমান বদির মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।