শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ’র মুখপাত্ররা, যারা সাত বছর আগে ২০১২ সালে ছাত্রাবস্থায় ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের মুখপাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র মওদুদ মিষ্টি বলেন, “উপাচার্য কখনোই ডাকসুর সভাপতির পদে থাকা উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের একটা সংগঠনের সভাপতি কীভাবে উপাচার্য হয়? আপনারা জানেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপাচার্য চাইলেই ডাকসু নির্বাচন দিতে পারেন, নাও দিতে পারেন। এটি মুক্ত চিন্তা ও জ্ঞানচর্চায় প্রতিবন্ধক, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার যে প্রক্রিয়া তাতে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিরাই উপাচার্য হন। এরা ক্ষমতা চর্চার জন্য শুধু একপেশে সিদ্ধান্তগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেন। আমরা শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ থেকে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের এটা থেকে মুক্তি দেওয়া হোক।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের মুখপাত্র মওদুদ মিষ্টি। এতে বক্তব্য রাখেন ডাকসু নির্বাচন চেয়ে রিট আবেদেনের পক্ষে আদালতে লড়াই করা আইনজীবী ব্যারিস্টার মনজিল মোর্শেদ, মঞ্চের অন্য দুই মুখপাত্র নূর বাহাদুর ও তোয়াহা ফারুক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সৌমিত্র দাস শুভ্র, সাদমান সাকিব, মাসুদুর রহমান, ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।
ডাকসুতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহির জায়গাটিও গঠনতন্ত্রে না থাকার বিষয়টি তুলে ধরা হয় লিখিত বক্তব্যে।
“ডাকসুর প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয় শিক্ষার্থীদের সরাসরি ভোটে। তারপর? তারপর তারা আর কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য থাকেন না। গঠনতান্ত্রিকভাবে তো না-ই। ডাকসু প্রতিনিধিদের 'রি-কল' করার কোনো নিয়মই গঠনতন্ত্রে নেই।”
ডাকসু নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করতে শিক্ষার্থীদের গঠনতন্ত্র ‘পাঠ-পর্যালোচনার’ আহ্বান জানান তারা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বড় অংশ ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে ব্যয় করেছি। ডাকসুকে চাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বলার, লড়াই করার সংগঠন হিসেবে। আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করি, বর্তমান শিক্ষার্থীরা গঠনতন্ত্র পাঠ-পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এই গঠনতন্ত্র বুঝতে বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাধীন বিচার-বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটাবেন। এই গঠনতন্ত্রকে কীভাবে আরো শিক্ষার্থীবান্ধব করা যায় সে বিষয়টিও উঠুক আলোচনারা টেবিলে।”
তিনি বলেন, “তবে শুধু উপাচার্যরা চাইলেই ডাকসু নির্বাচন হবে না। এজন্য ছাত্রদেরও দায়িত্ব রয়েছে। আদালতে এমনও কথা উঠেছিল যে, নির্বাচন হলে ক্যাম্পাসে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। তখন আমরা বলেছি, সংঘাত তো অনেক নির্বাচনেই হয়, তাই বলে কি নির্বাচন হয় না?
“এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আইজিপির শরণাপন্ন হয়ে নির্বাচন করা যেতে পারে। রায়ে পুলিশের মহাপরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার প্রয়োজনে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করবে। তাই কোনো অজুহাত দেখিয়ে যেন না বলা হয় যে, ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নেই।”