মাদক-অস্ত্র মামলার তদন্তকারীদের চোখে রাখার নির্দেশ

মাদক ও অস্ত্র মামলার তদন্ত যারা করছেন, তাদের সময় বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের কাজের উপর নজর রাখতে বলেছে উচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Feb 2019, 02:52 PM
Updated : 12 Feb 2019, 02:52 PM

মাদক ও অস্ত্র মামলার তদন্ত শেষ করতে হবে এক মাসের মধ্যে। এই সময়ের মধ্যে তা শেষ করা না গেলে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।

আর তদন্ত কর্মকর্তাদের কাজ পর্যবেক্ষণে উচ্চপদস্থ একজন পুলিশ কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করতে হবে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক ও সব পুলিশ সুপারকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাই কোর্ট বেঞ্চের দেওয়া আদেশে।

মাদক মামলায় নরওয়ে প্রবাসী ড. নুরুল ইসলাম শেখের আগাম জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার আদালত এসব আদেশ দেয়।

আদালত এই মাদক মামলার বাদী গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার এসআই মো. আব্দুল হালিমকে সতর্ক করে ওই থানা থেকে তাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করতে গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে।

আদালতে নুরুল ইসলাম শেখের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী। এসআই হালিমের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারওয়ার কাজল।

মাদক ও অস্ত্র মামলার তদন্ত ও অভিযোগপত্র দাখিলে তদন্ত কর্মকর্তাদের দেরির বিষয়টি তুলে ধরে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে, “অনেক মাদক মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশ লম্বা সময় নেয়। কিন্তু এই মামলায় পুলিশ লম্বা সময় নেয়নি। পুলিশ ইচ্ছে করলে ১৫ দিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে।

“তারপরও অনেক মামলায় দেখা যায় মাসের পর মাস, এমনকি কিছু মামলায় বছরের পর বছর চলে যায়। কিন্তু অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় না। এ অবস্থায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতার প্রয়োজন।”

তদন্ত দ্রুত শেষ না হলে বিচার শুরুতে দেরি হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরে আদালত।

ফাইল ছবি

পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যরা বলছেন মাদক মামলা ও অস্ত্র মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। এজন্য তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত সম্পন্ন করার কোনো বিকল্প নেই।

“তদন্ত কর্মকর্তারা যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে, তবে মামলা প্রমাণ করাও সহজ হয়। কারণ, মামলার সাক্ষীদের সহজেই পাওয়া যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে বিলম্ব হলে অনেক সাক্ষী অস্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে চলে যায়।”

গত বছরের ২৯ নভেম্বর জয়দেবপুর থানার এসআই হালিমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ১০টি ইয়াবাসহ রাজু আহমেদ নামে এক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাজুর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে নরওয়ে প্রবাসী এবং বাংলাদেশ নরওয়ে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ড. নুরুল ইসলামসহ তিনজনকে মামলাটিতে আসামি করা হয়।

তখন নুরুল ইসলাম শেখ আগাম জামিন নিতে হাই কোর্টে আসেন। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর হাই কোর্ট এ মামলায় তাকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়।

একই সঙ্গে আদালত গাজীপুরের পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চায়, কীভাবে নুরুল ইসলাম শেখকে এ মামলায় জড়ানো হল? বিষয়টি তদন্ত করে ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলে।

সে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে মামলার বাদী এসআই হালিমকে তলব করে আদালত।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানির পর রায় দিল হাই কোর্ট।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাই কোর্ট বলেছে, এত দ্রুত পুলিশের অভিযোগপত্র দাখিল করাটা অবশ্যই প্রশংসার বিষয়। কিন্তু তদন্তকালে কোনো সাক্ষীই নুরুল ইসলামের নাম উল্লেখ করেননি।

মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে পার্থক্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আদালত বলেছে, এখানে মামলার বাদী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নুরুল ইসলামের নাম জড়িয়েছেন। এ বিষয়টি তদন্তকারী এড়িয়ে গেছে। বাদীকে প্রশ্ন করা হলে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে বলে কথা দিয়েছেন।