না. গঞ্জের ইউএনওর ওএসডি তদন্তের দাবি সংসদে

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগম বীণাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করার ঘটনা তদন্তের দাবি উঠেছে সংসদে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2019, 03:30 PM
Updated : 11 Feb 2019, 07:59 PM

সোমবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এ দাবি করেন।

পরে নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানও তার দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ওএসডি হওয়া হোসনে আরা অভিযোগ করেছেন, সন্তানসম্ভবা হওয়ায় ‘একজন বিশেষ কর্মকর্তা’ তাকে বিভিন্ন মহলে ‘অযোগ্য’ হিসেবে উপস্থাপন করে বদলির পাঁয়তারা করছিলেন।

হোসনে আরার ফেইসবুক পোস্ট নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে আলোচনা

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচের এই কর্মকর্তার দাবি, ওএসডির খবর শুনে ‘প্রচণ্ড মানসিক চাপে তার ফুসফুসের রক্ত চলাচল অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায়’ অস্ত্রোপচার করে প্রিম্যাচিউর সন্তানের জন্ম হয়, যে শিশুটি স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিইউতে আছে।

গত শনিবার তিনি ফেইসবুক পোস্টে এই অভিযোগ করার পর সারা দেশে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

তার ওএসডির আদেশ খতিয়ে দেখার দাবির বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী পদক্ষেপ নেবেন বলে সংসদে সভাপতির আসনে থাকা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া আশা প্রকাশ করেন।

সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে মেহের আফরোজ ওএসডির প্রেক্ষাপটে হোসনে আরার ফেইসবুক স্ট্যাটাসের প্রসঙ্গটি তোলেন।

সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, সন্তানসম্ভবা নারীর সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হয়, তা সমাজ উপলব্ধি করতে পারে না।

একজন নারী সন্তানসম্ভবা হলে বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একজন ইউএনও অত্যন্ত বেদনাবিধূর স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি নয় বছর পর মা হতে যাচ্ছিলেন। নির্বাচনের সময় তিনি সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দায়িত্বে কোনো গাফিলতি ছিল না। এপ্রিল মাসে তার সন্তান জন্মগ্রহণের কথা ছিল।

“তিনি যখন ডাক্তারের কাছে গেলেন তখন জানতে পারলেন ওএসডি হয়েছেন। এই খবরটি শুনে মানসিক চাপে আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তিনি সন্তান প্রসব করেন। সময়ের আগে সন্তানটি প্রসব করার কারণে শিশুটি মৃত্যুপথযাত্রীর মতো অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসায় আছে। নয় বছর মা হওয়া, সেই শিশুটি, তার মানসিক কী অবস্থা তা আমরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পারছি।” 

মেহের আফরোজ বলেন, “একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যদি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে থাকেন তাহলে সন্তানসম্ভবা অবস্থায় কেন তাকে ওএসডি করা হল? এটি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। একজন অন্ত:স্বত্ত্বা মায়ের সাথে কেমন আচরণ করা উচিত, সমাজ এখনো সেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে না। এই সময় এমন আচরণ উচিত নয় যাতে সন্তান বা মায়ের ক্ষতি হতে পারে। সন্তান সুস্থভাবে জন্ম না নিলে তা কেবল মা বা তার পরিবার নয়, দেশের জন্য বোঝা হয়ে যেতে পারে।”

এই ঘটনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান সাবেক প্রতিমন্ত্রী।

ইউএনওকে ওএসডি করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানও

পরে নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, “আমার পরম আত্মীয়র সাথে এই ঘটনা ঘটলে যতটা দুঃখ পেতাম, এই ঘটনায় সেই রকম দুঃখ পেয়েছি। ঘটনায় আমি লজ্জিত হয়েছি। তিনি আমার নির্বাচনী এলাকার সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার। তিনি সৎ, কর্মঠ ও অত্যন্ত ভালো সরকারি কর্মকর্তা।”

কার নির্দেশে ওই কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, প্রশ্ন রেখে শামীম ওসমান বলেন, “এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে খারাপ কিছু হলে আমি নিজেও নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। আমি মনে করি, জনপ্রশাসন মন্ত্রীকে কোনো দিকনির্দেশনা থাকলে তা দিতে পারেন।”