দুদককে বড় দুর্নীতির দিকে নজর দিতে বলল হাই কোর্ট

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক উপস্থিত আছে কি না, কোচিং করাচ্ছে কি না, তা দেখার চেয়ে বড় বড় দুর্নীতি ঠেকাতে দুদককে মনোযোগী হতে বলেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2019, 02:29 PM
Updated : 7 Feb 2019, 02:34 PM

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের নীতিমালা নিয়ে করা একটি রিট আবেদনের রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালতের এই মত আসে।

দুদকের এই বিষয়ক কাজে আদালতের ‘বিরক্তি’ প্রকাশ পেয়েছে, বলেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।

স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যে বন্ধে ২০১২ সালে প্রণীত সরকারি নীতিমালা বৈধ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার রায় দেয় বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিয়ে সংবাদপত্রে খবর দেখে দুদক স্ব-উদ্যোগে অনুসন্ধান চালিয়ে সরকারকে একটি সুপারিশ দেয়। তারপরই ২০১২ সালে ওই নীতিমালা প্রণীত হয়েছিল।

তারপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদকের নোটিস পেয়ে ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক ফারহানা খানম, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ কবীর চৌধুরী ও গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক শাহজাহান সিরাজ তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে আসেন, যার রায় হল বৃহস্পতিবার।  

রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “দুদক এটা করতে পারে কি না বা দুদক আইনে এর এখতিয়ার আছে কি না, সে প্রশ্ন তুলে সরকারকে দেওয়া রিপোর্টটি আদালতে চ্যলেঞ্জ করা হয়েছিল। আজকে সেটি নিষ্পত্তি হয়ে গেল।”

রায়ে দুদকের অনুসন্ধান-তদন্ত নিয়ে কী বলা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এর চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ বা দুর্নীতি আছে; যেমন, কাস্টমস, পোর্ট, ল্যান্ড এসব জায়গায়। সেগুলোকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

“এটাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু এর চাইতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে যেমন ব্যাংকিং সেক্টরে। হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। দুদক শুড বি মোর কশাস।”

দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা অনুযায়ী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপের সুযোগ দুদকের থাকলেও এটা বেসরকারি স্কুল- কলেজের জন্য প্রযোজ্য নয় বলে আদালত বলেছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “বেসরকারি স্কুলে কে গেল না গেল, কে কোথায় জড়িত, এটা দুদকের পার্ট না। কোর্টের পর্যবেক্ষণে দুদকের বিষয়ে একটু বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে।

“আমাদের অন্যান্য সেক্টরের দুর্নীতির যে বিষয়গুলো আসছে, দুদককে অবশ্যই সে বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারি প্রাইমারি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে দুদক পারে। কিন্তু সেগুলো বটমে থাকা উচিৎ।”

দুদকের কৌঁসুলি খুরশিদ আলম বলেন, কোচিং বাণিজ্য অনুসন্ধান এবং তদন্ত করার এখতিয়ার দুদকের আছে। তবে দুদকের একটি অগ্রধিকার তালিকা থাকতে হবে, কোন বিষয়ে কমিশন তদন্ত বা অনুসন্ধান করবে।

গত মাসে নতুন সরকার গঠনের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযানের ঘোষণা দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছিলেন, নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, স্বাস্থ্য-শিক্ষা বাণিজ্যসহ সব জায়গায় যে সব দুর্নীতি-অনিয়ম রয়েছে, তা দমনে নামবেন তারা।

এরপর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষকের উপস্থিতি নিজেও দেখেন দুদক চেয়ারম্যান। চট্টগ্রামে গিয়ে তিনি বলেন, দুদক এখন শিক্ষায় দুর্নীতি নির্মূলে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে।

পাশাপাশি সংস্থার কর্মকর্তারা বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ শুরু করে।