দীর্ঘদিন পর নির্বিঘ্নে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল

দীর্ঘদিন পর কোনো ধরনের বাধা ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এলেন বিএনপি সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের কয়েকশো নেতাকর্মী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Feb 2019, 10:19 AM
Updated : 7 Feb 2019, 12:02 PM

ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সকালে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিতে ক্যাম্পাসে আসেন তারা। দীর্ঘ সময় পর ক্যাম্পাসে আসতে পেরে অনেকেই উচ্ছ্বসিত হন, মোবাইল ফোনে ছবিও তুলতে দেখা যায় অনেককে।

সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী কয়েকশো নেতাকর্মী নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে আসেন। শীর্ষ চার নেতা উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢুকলেও বাকিরা বাইরে ছিলেন।

উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়ে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার পর ভিসি চত্বর, টিএসসি, চারুকলা হয়ে হেঁটে শাহবাগ যান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার সমর্থক সংগঠন ছাত্রলীগের দাপটে কোনঠাসা হয়ে পড়তে থাকে ছাত্রদল।

২০১০ সালের ১৮ জানুয়ারি ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল  বের করলে ছাত্রলীগের হামলার মুখে পড়ে। পরের বছর একবার মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়।

দুই বছর আগে ২০১৭ সালের ১০ অগাস্ট ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ডাকা উন্মুক্ত আলোচনায় যোগ দিয়ে ছাত্রলীগের ধাওয়ার মুখে পড়েন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

এরপর গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দিতে এসে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের আলিঙ্গনের বিরল দৃশ্য দেখা যায়।

ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আসছে ছাত্রদল।

সবশেষ গত ১০ জানুয়ারি প্রক্টোরিয়াল বডির পাহারায় ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলোচনায় যোগ দেন ছাত্রদলের দুই নেতা। সেখানেও তারা ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নেই বলে জানান।

উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান

বৃহস্পতিবার উপাচার্যের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ক্যাম্পাস ও হলগুলোতে ন্যূনতম তিন মাস সব সংগঠনের সহাবস্থান ও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল।

তফসিল ঘোষণার পূর্বে ৩ মাস সহাবস্থান নিশ্চিত করা ছাড়া ছাত্রদলের অন্য দাবিগুলো হল-

অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা,  বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩০ বছর বয়সসীমার পরিবর্তে ভর্তি সেশন নির্ধারণ করা, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের প্রচারণায় অংশগ্রহণে কোনো বাধা প্রদান না করা এবং হামলা ,মামলা ও গ্রেফতার না করার বিষয়টি নিশ্চিত করা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও নেতাদের উপর হওয়া হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, ডাকসু নির্বাচনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটিগুলোকে পূনর্গঠন করা এবং নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের এসব কমিটিতে অন্তর্ভূ্ক্ত করা,  ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৫ এর (এ) অগণতান্ত্রিক ধারাটি সংশোধন করে সভাপতি ও ছাত্র সংসদের যৌথ সিদ্ধান্তের বিষয় সংযোজন করা এবং ৮ এর (এম) ধারাটি সংশোধন করা। 

উপাচার্য কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান সাংবাদিকদের বলেন, “মাননীয় উপাচার্য আমাদের দাবিগুলো আন্তরিকভাবে শুনেছেন এবং আমাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছেন।  তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেবেন৷ আমরা বিশ্বাস করি আমাদের যৌক্তিক দাবি প্রশাসন মেনে নেবে এবং সকলের অংশগ্রহণে একটি কার্যকর  ডাকসু নির্বাচন হবে।”

তফসিলের আগে তিন মাস সহাবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সহাবস্থানের বিষয়টি এমন যে এটিকে যদি কার্যকর করতে হয় তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের দরকার। আজকে সহাবস্থান দিয়ে কালকে কিন্তু এটাকে কার্যকর বা স্থায়ী বলা যাবে না। ডাকসুকে কেন্দ্র করে সহাবস্থান নয়, আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি স্থায়ী সহাবস্থান থাকুক।”

এর আগে মতবিনিময় সভার পর ছাত্রলীগ আহ্বান জানালেও মধুর ক্যান্টিনে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, “পরিবেশ পরিষদের সভার পর আমি চা খেতে যেতে চেয়েছি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বাগত জানালেও অন্য নেতৃবৃন্দ আন্তরিকতা দেখায়নি। এজন্য আমরা যাইনি।

“তাছাড়া কিছুদিন আগেও বুরহান উদ্দীন সৈকত নামে ছাত্রদলের জহরুল হক হলের এক নেতাকে মেরে আহত করা হয়েছে। এরকম একটা পরিবেশে আমরা চাই না যে, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, আমাদের আগমনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হোক এবং ডাকসু নির্বাচন ব্যাহত হোক।”

ছাত্রদলের স্মারকলিপি পাওয়ার পর উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “আমি তাদের বলেছি যে, ডাকসুর জন্যে নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র রয়েছে এবং একটি আচরবিধি প্রণীত হয়েছে। ডাকসুর গঠনতন্ত্র এবং আচরণবিধি অনুসরণ করে ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বচন অনুষ্ঠিত হবে। গঠনতন্ত্রের বিধিবিধান এবং আচরণবিধি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রযোজ্য হবে।”

তিনি বলেন, “ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তাদের প্রক্রিয়া মোতাবেক পরিচালিত হবে। উগ্রপন্থি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত এবং পরিবেশ পরিষদের বাইরের অন্য কোনো সংগঠনের কর্মতৎপরতা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকবে না। তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, তারা যেন পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে সকলে যত্নশীল থাকে।”

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল কবে নাগাদ ঘোষণা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের নির্বাচন পরিচালনার জন্যে একটি পরিষদ রয়েছে, চিফ রিটার্নিং অফিসার এবং তার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসাররা রয়েছেন। তারা এ বিষয়ে তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন। গঠনতন্ত্র এবং আচরণবিধি অনুসরণ করে তারা সকল কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করবেন। এটিই হলো আমাদের রীতি। তারাই এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন।”