পদ্মা সেতু নির্মাণ এবছরই শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী 

চলতি বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করার ‘সর্বাত্মক’ প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Feb 2019, 12:02 PM
Updated : 6 Feb 2019, 12:02 PM

দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার একথা জানান সরকার প্রধান।

দেশের দীর্ঘতম এই সেতু নির্মাণে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, “কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত জটিল এ সেতুর পাইল ড্রাইভিং চলাকালে সয়েল কন্ডিশনের কারণে কিছু পাইলের পুনরায় ডিজাইন করতে হয়েছে। দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এ সকল পাইলিং ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।

“এ সত্বেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।”

ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৬২ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রেল সংযোগ স্থাপন এবং পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপনের কাজও চলছে।”

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সময় নির্ধারিত থাকলেও কয়েকটি পিলারের নকশা জটিলতায় তা হয়নি।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে।  

নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে মোট ছয়টি স্প্যান বসানো হয়েছে। প্রতিটি ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মোট ৪১টি স্প্যান ৪২টি পিয়ারের ওপর বসিয়েই তৈরি হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। দ্বিতল এই সেতুতে থাকবে রেল চলাচলের ব্যবস্থা।

পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ষষ্ঠ স্প্যান বসানো হয় সম্প্রতি

পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। এই সেতু চালু হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেড় শতাংশ বেড়ে যাবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, পদ্মা রেল সংযোগের আওতায় ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার ৫৮২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলার আরও এক হাজার ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

রেলপথ না থাকা বরিশাল জেলাকেও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার সংসদে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা, একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ের কারণ, রোহিঙ্গা সমস্যা, উচ্চশিক্ষা, তরুণদের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী।

বেকারত্ব দূর ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে আনোয়ারুল আজিমের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রশিক্ষণ, ঋণ সুবিধা, অনুদান ও কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যুব সমাজকে করে তোলা হচ্ছে শিক্ষিত, দক্ষ, কর্মমূখী ও আত্মনির্ভরশীল।”

সংসদে শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

তিনি জানান, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ বছরের উর্দ্ধে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫৮ দশমিক ২ শতাংশ। এরমধ্যে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

“বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোর লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৬-১৭ এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বর্তমানে ২৬ লাখ ৭৭ হাজার বেকার রয়েছে, যা মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আরো এক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।”

নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে সাংসদ ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচিত তথ্য যাচাইয়ের জন্য গত বছর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে আট হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা সরবরাহ করলে তারা তাদের মধ্যে পাঁচ হাজার ৩৮৪ জনকে মিয়ানমারের আধিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাকি দুই হাজার ৪৩১ জনকে নিবন্ধনকৃত পরিবারকে তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে মিয়ানমার সরকার আমাদের জানিয়েছে।

“দুদেশের সম্মতিক্রমে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি। রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আশা করা যায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগিরই রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে যথাসম্ভব দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”

প্রযুক্তি ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে বজলুল হক হারুনের প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশের উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে অগ্রাধিকার কার্যক্রম চিহ্নিত করে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসহ বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”

সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না। প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে উপভোগের কোনো বিষয় নয়; এটি একটি দায়িত্ব এবং অবশ্যই কঠিন দায়িত্ব। যখনই আপনারা এ দায়িত্ব দিয়েছেন, তখনই আমি আরও বেশি করে দায় বোধ করেছি।”