অন্যের অসুবিধা হবে বলে বইমেলায় আসা হয় না: হাসিনা

‘ইচ্ছা থাকলেও’ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তাকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অন্যদের অসুবিধা হবে বলে বইমেলায় আসা হয় না বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2019, 01:04 PM
Updated : 1 Feb 2019, 01:08 PM

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন শুক্রবার বাংলা একাডেমিতে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য পড়ে আসা শেখ হাসিনার মতে, বইমেলা শুধু বই-কেনা বেচা নয়, বইমেলা হচ্ছে ‘আমাদের প্রাণের মেলা’। 

এখন বইমেলায় এসে ঘুরে ঘুরে বই দেখার আনন্দ নিতে না পারায় আক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুক্রবার বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন শেষে মেলা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

শেখ হাসিনা বলেন, “যদিও আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না তখন বইমেলায় আসতাম, মেলা ঘুরে বেড়াতাম। এখন বলা গেলে এক ধরনের বন্দি জীবনই যাপন করতে হয়, সে আসার সুযোগ হয় না।”

না আসার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আসতে গেলে অন্যের অসুবিধা হয়। অন্যের অসুবিধা, নিরাপত্তার কারণে মানুষের যে অসুবিধাগুলো হবে সেটা বিবেচনা করে আসার ইচ্ছা আর হয় না। আমার জন্য অন্যেরা কষ্ট পাবে। সব সময় সত্যি কথা বলতে কি, মনটা পড়ে থাকে এই বইমেলায়।”

একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা তরুণদের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাহান্নোর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়- এসবের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বাস্তব রূপ লাভ করে।

“কত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি, সেটা তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে।”

তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইলসহ বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে বই পড়ার সুযোগ তৈরি হলেও ছাপা বইয়ের কদর কমবে না বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুক্রবার বিকালে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

তিনি বলেন, “বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। এখন মোবাইল ফোনেই সব পাওয়া যায়। আবার কেউ ছোট ছোট ডিভাইস ব্যবহার করেন। এই হাতে একটা যন্ত্র নিয়ে পড়ার, সত্যি কথা বলতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়ে দেখি। কিন্তু শান্তিটা পাওয়া যায় না। বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ সেই আনন্দটা আমরা সব সময় পেতে চাই। 

“তাই বইয়ের চাহিদা কিন্তু কখনো শেষ হবে না- এটা আমি বলতে পারি। কারণ যতই আমরা যান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করি না কেন বইয়ের মলাট, বই, বই সেলফের উপর রাখা এবং সেটা পড়ার মাঝে একটা আলাদা রকমের আনন্দ আছে।”

তবে বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে, খবরাখবর রাখতে অনলাইনে থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আনন্দিত হলাম আগে শুধু চারটি বিষয়ের উপর এখানে পুরস্কার দেওয়া হত। এটা এখন আরো অনেকগুলো বিষয়ের উপর দেওয়া হবে, দশটি বিষয় উপর দেওয়া হবে। এখানে সংখ্যার সীমাবদ্ধতা থাকবে না। 

“কাজেই সেজন্য আমি বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানাই। সেই সাথে সাথে আমি আর একটু বলতে চাই, পুরস্কারের সম্মানিটাও আরেকটু বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সেটা আমাদের পক্ষ থেকে যা করণীয় আমরা করব।”

বাংলা একাডেমিতে শুক্রবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

তবে অর্থ দিয়ে এই পুরস্কার বা সম্মান জানানোর বিষয়টি পরিপূর্ণ হয় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যারা গবেষণা করেন, লেখেন-তারা আসলে সমাজকে, জাতিকে সমৃদ্ধশালী করেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের নজরদারির ভিত্তিতে তৈরি বিভিন্ন প্রতিবেদন নিয়ে একটি বই প্রকাশ হওয়ার খবর দেন শেখ হাসিনা।  

১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গোয়েন্দাগিরির ওই প্রতিবেদনগুলো ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অফ ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’-এর দ্বিতীয় খণ্ড এদিন বইমেলায় এসেছে।

“এই দলিলে আপনারা অনেক তথ্য পাবেন। সেখানে সত্য জানার বিরাট সুযোগ রয়েছে,” বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা। 

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে কবি শঙ্খ ঘোষ, মিশরের লেখক-গবেষক মোহসেন আল-আরিশি, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী উপস্থিত ছিলেন।