‘পোজ’তো দিলাম, আর কত: আদালতের বারান্দায় রনি

কখনও বিমর্ষ, কখনও উৎসুক, কখনও আবার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি; ইস্কাটনের জোড়া খুনের মামলার রায়ের সময় সাবেক সাংসদ পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির আচরণে দেখা গেল বিচিত্র অনুভূতির খেলা।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2019, 05:42 PM
Updated : 30 Jan 2019, 07:52 PM

বুধবার এ মামলার রায়ে গুলি চালিয়ে দুইজনকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল ঈমাম।

রায়ে তিনি বলেন, মাদকাসক্ত রনি গুলির ঘটনার সময় স্বাভাবিক ছিলেন না, তা প্রমাণিত হয়েছে। ৩০২ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলেও মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তাকে মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এ সময় কাঠগড়ার গ্রিলে পা রেখে উঁচু হয়ে মনোযোগ দিয়ে রায় শুনতে দেখা যায় আসামি রনিকে।

আর রায়ের পর আদালতের বারান্দায় ছবি তুলতে থাকা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে রনি বলেন, “পোজতো দিলাম, আর কত!”

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে ঢাকার নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আবদুল হাকিম নামের এক রিকশাচালক এবং ইয়াকুব আলী নামের এক অটোরিকশাচালক আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই বছর ৩১ মে মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের এমপি পিনু খানের বাসা থেকে তার ছেলে রনিকে আটক করে পুলিশ। বলা হয়, রনিই সেদিন গাড়ি থেকে গুলি ছুড়েছিলেন।

প্রায় চার বছরের মাথায় বুধবার সকালে এ মামলার রায়ের জন্য কারাগার থেকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয় আকাশি রঙের সোয়েটার পরা রনিকে।

এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তাকে দোতলার আদালতকক্ষে নিয়ে এজলাসের ডান দিকে আসামিদের জন্য গ্রিল-ঘেরা কাঠগড়ায় রাখা হয়।

নিচতলার হাজতখানা থেকে দোতলায় তোলার সময় সাংবাদিকদের ছবি তোলা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন রনি।

একবার তিনি বলেন, “… পোজ দিই?”

এ সময় সাংবাদিকরা আরও ছবি নিতে থাকলে রনি তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, “তোলেন তোলেন, সুন্দর করে তোলেন।”

দোতলায় উঠে যাওয়ার সময় তাকে বলতে শোনা যায়, “হয় নাই? আরো তোলেন। যাওয়ার সময়ও সুন্দর করে তুইলেন।”

অন্য একটি মামলার শুনানি শেষ করে পৌনে ৩টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা শুরু করেন বিচারক মঞ্জুরুল ঈমাম।

সাজার রায়ের পর ঢাকার আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন বখতিয়ার আলম রনি। জোড়া খুনের মামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ পিনু খানের এই ছেলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

আলোচিত এ মামলার রায় শোনার জন্য আইনজীবী, পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে আদালতকক্ষ ছিল পরিপূর্ণ । ফলে কাঠগড়া থেকে বিচারককে দেখতে পাচ্ছিলেন না রনি।

এক পর্যায়ে গ্রিলে পা রেখে হাতে ভর দিয়ে অনেকটা উঁচু হয়ে রায় শুনতে দেখা যায় সাবেক সাংসদের পুত্রকে।

রনির রায় পড়তে ১০ মিনিটের মত সময় নেন বিচারক; এরপর তিনি এজলাস ত্যাগ করেন।

পুলিশ সদস্যরা আসামিকে কারাগারে নিয়ে যেতে কাঠগড়ার সামনে এলে তাদের কাছে দুই মিনিট সময় চান রনি।

তিনি বলতে থাকেন, “দুইটা মিনিট পরে বের করেন। আমি একটা জিনিস জেনে যাব।”

একজন পুলিশ সদস্য তখন বলেন, “পরে জানতে পারবেন, এখন চলেন।”

আদালত ভবনের নিচতলার হাজতখানার দিকে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের ছবি তোলার সুযোগ দিতে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে থামেন রনি।

এ সময়ও তার মুখে ছিল তাচ্ছিল্যের হাসি। হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা আরও ছবি তুলতে থাকলে তিনি বলেন, “… আর কত!”