একাদশ সংসদ নির্বাচন: এবার ব্যয়ের হিসাব নেওয়ার পালা

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক হাজার আটশ’ জনেরও বেশি প্রার্থীকে নির্বাচনী ব্যয়ের বিবরণী বৃহস্পতিবারের মধ্যে জমা দিতে হবে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2019, 03:18 AM
Updated : 30 Jan 2019, 03:28 AM

ব্যয়ের হিসাব দাখিলে ব্যর্থ হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী জরিমানাসহ ২ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে পাঁচ শতাধিক প্রার্থীর মধ্যে ৩৩ জন নির্ধারিত সময়ে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। তখন একটি আসনের হিসাব না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিল প্রায় ১৮৫০ জন। এই নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যয়সীমা ছিল ২৫ লাখ টাকা এবং ভোটার প্রতি ব্যয় ছিল সর্বোচ্চ ১০ টাকা।

১ জানুয়ারি ভোটের ফলাফল গেজেট প্রকাশ করে ইসি। গেজেটের ২৯৮ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, বিএনপি ৫টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাসদ ২টি, গণফোরাম ২টি, বিকল্পধারা ২টি, তরিকত ফেডারেশন ১টি, জেপি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জিতেছে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নির্বাচিত প্রার্থীর নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে (বিজয়ী/পরাজিত সবাইকে; প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনে কোনো ব্যয় না হলেও) নির্ধারিত ফরমে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে, প্রার্থীকে নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। ওই হিসাব থেকেই প্রার্থীকে নির্বাচনী ব্যয় করতে হয়।

এছাড়া প্রতিটি খাতে ব্যয়ের ভাউচারসহ মোট হিসাব রিটানিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করার বিধান রয়েছে। ওই হিসাব বিবরণি এফিডেভিট করে ডাকযোগে ইসি সচিবালয়েও পাঠাতে হয়।

রিটার্নিং কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব প্রার্থীকে এ বিষয়টি জানিয়েছেন বলে জানান ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ।

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনে ২ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে সংশ্লিষ্টরা।

এক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজেই আইন অমান্যকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করবেন। যে ক্ষেত্রে নির্বাচনী মামলা দায়ের করা হয়নি, অপরাধ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।

দলের ব্যয় জমা মার্চের মধ্যে

নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে দলীয় নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব মার্চের মধ্যে ইসিতে জমা দিতে হবে।

প্রার্থী অনুপাতে দলগুলোর ৭৫ লাখ টাকা থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের সুযোগ ছিল।

৫০ জনের কম প্রার্থী হলে ৭৫ লাখ টাকা, ৫০-১০০ প্রার্থী হলে দেড় কোটি টাকা, ১০১-২০০ প্রার্থী হলে ৩ কোটি টাকা এবং ২০১ প্রার্থীর বেশি হলে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ের সুযোগ ছিল।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (৪৪ সিসিসি) অনুযায়ী, ভোটের গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ে তা না দিলে দলগুলোকে সতর্ক করে এক মাসের মধ্যে হিসাব দিতে নোটিস দেওয়া হয়।

এরপরও ব্যর্থ হলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়ার সুযোগ পায় দলগুলো।

দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১২টি দলই নির্ধারিত সময়ে হিসাব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সতর্ক করেছিল ইসি।