ডাকসু: ভোটকেন্দ্র হলেই, বয়সসীমা ৩০ বছর

তিন দশক পর নির্বাচনের জন্য ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2019, 03:53 PM
Updated : 29 Jan 2019, 06:10 PM

এই সিদ্ধান্ত অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে হলগুলোতে; প্রার্থী ও ভোটার হতে পারবেন ৩০ বছর বয়সের মধ্যে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি এমফিলের শিক্ষার্থীরাও।

মঙ্গলবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় গঠনতন্ত্রে এসব সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।

গঠনতন্ত্র সংশোধনে ডাকসুর কয়েকটি পদেও পরিবর্তন এসেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান জানিয়েছেন।

পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান নির্বাচনের জন্য আগামী ১১ মার্চ ইতোমধ্যে দিন ঠিক করেছেন।

আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। 

গত ২১ জানুয়ারির ওই বৈঠকে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও তাদের মিত্র সংগঠনগুলো আগের মতোই হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিল। অন্যদিকে তার বিরোধিতা করে ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো একাডেমিক ভবনগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানায়।

তবে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে সব ছাত্র সংগঠনগুলোই সহমত প্রকাশ করেছিল।

হলে ভোটকেন্দ্র না করার দাবি ছিল ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর (ফাইল ছবি)

এসব মতামত নিয়ে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সভায় বসে সিন্ডিকেট।

১৮ সদস্যের সিন্ডিকেটের ১৬ জনের সদস্যের উপস্থিতিতে গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাবাবলি অনুমোদিত হয় বলে রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান জানান। 

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যে সব শিক্ষার্থী স্নাতক, সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও এমফিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত এবং যারা বিভিন্ন হলে আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে সংযুক্ত রয়েছেন এবং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখে যাদের বয়স কোনোক্রমেই ৩০ বছরের বেশি হবে না, কেবল তারাই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটার হতে পারবেন।”

তিনি বলেন, ৩০ বছরের ঊর্ধ্বের শিক্ষার্থীরা যে কোর্সেই অধ্যয়ন করুক না কেন, তারা ভোটার হতে পারবেন না।

ভোটার হওয়ার যোগ্যতা যাদের রয়েছে, তারা প্রার্থীও হতে পারবেন বলে জানান রেজিস্ট্রার।

পরিবেশ পরিষদের সভার পর একসঙ্গে সাংবাদিকদের সামনে এসেছিলেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কারা ভোটার হতে পারছেন না, তাও জানান তিনি।

“যারা সান্ধ্যকালীন বিভিন্ন কোর্স, প্রোগ্রাম, প্রফেশনাল, এক্সিকিউটিভ, ডিপ্লোমা, এমএড, পিএসডি, ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স, সার্টিফিকেট কোর্স অথবা এ ধরনের অন্যান্য কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন, তারা ভোটার হতে পারবেন না।”

সরকারি-বেসরকারি অথবা দেশে বা বিদেশে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো শিক্ষার্থী ভোটার হতে পারবেন না। অধিভুক্ত বা উপাদানকল্প কোনো কলেজের কোনো শিক্ষার্থীও ভোটার হতে পারবেন না।

ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত জানিয়ে এনামউজ্জামান বলেন, “গঠনতন্ত্রের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলেই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে।”

ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা (ফাইল ছবি)

ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সুপারিশ, প্রস্তাব এবং সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে কয়েকটি সম্পাদক ও সদস্য পদ সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডাকসুর সভাপতির ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাবটিও সিন্ডিকেটে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

রেজিস্ট্রার বলেন, “সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী অনুমোদিত হওয়ার পর বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে। নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যাবে।”

এই নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমানকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাকে সহায়তার জন্য আরও পাঁচজনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনের আচরণবিধি

নির্বাচনের জন্য ৭ অধ্যাপকের সমন্বয়ে একটি 'আচরণবিধি কমিটি' গঠন করা হয়। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আচরণবিধির একটি খসড়াও অনুমোদন করেছে সিন্ডিকেট।

>> লিফলেট বা হ্যান্ডবিলে শুধু সাদাকালো ছবি ব্যবহার করা যাবে।

>> ভোটের প্রচারের সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত।

>> সভা-সমাবেশ ও অডিটোরিয়ামে মাইকের সাহায্যে প্রচার চালানো যাবে।

>> কোনো প্রকার স্থাপনা, দেয়াল লিখন, যানবাহনে লিফলেট, হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না।

>> সভা-সমাবেশ করতে ২৪ ঘণ্টা আগে অনুমতি নিতে হবে।

>> কোনো প্রার্থী, কোনো ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা যাবে না।

>> রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তিরাই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে।  

>> হলগুলোতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। প্রয়োজনবোধে হল প্রাধ্যক্ষ আরও বসানোর ব্যবস্থা করবেন। ক্যম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতেও প্রয়োজনে আরও বসানো হবে।

 >> বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নিরবচ্ছিন্ন রাখা হবে।

রেজিস্ট্রার বলেন, “ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে আচরণবিধির বিষয়ে যে প্রস্তাবনা, সুপারিশ বা মতামত দেওয়া হয়েছিল তা বিবেচনায় নিয়ে আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।”

তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে

ঘোষিত সূচি অনুযায়ী ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলবে।

সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল তিন দশক আগে; ১৯৯০ সালের পর আর নির্বাচন হয়নি।

ডাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের যথাযথ বিকাশ হচ্ছে না বলে রাজনীতিবিদরা হতাশা প্রকাশ করে আসছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে গিয়ে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে বলেছিলেন।

ডাকসু নির্বাচন চেয়ে আদালতে রিট আবেদন হয়েছিল, তাতে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা আসে গত বছর হাই কোর্ট থেকে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে ওই আদেশ স্থগিত করেছিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগ গত ৬ জানুয়ারি সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে নির্বাচন আয়োজনের বাধা কাটে। এর ফলে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন করতে হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।