গত বছর সড়কে মৃত্যুর ৪২% গাড়ি চাপায়: নিরাপদ সড়ক চাই

গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের মৃত্যুর পরিসংখ্যান দিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন বলেছে, ৪২ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে গাড়ি চাপার ঘটনায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2019, 11:20 AM
Updated : 12 Feb 2019, 08:08 AM

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সা‌লের সড়ক দুর্ঘটনার এই প‌রিসংখ্যান প্রতিবেদন তু‌লে ধ‌রেন।

তিনি বলেন, ছয়টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, শাখা সংগঠনগুলোর প্রতিবেদন, টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকার প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে সারাদেশে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘ‌টে‌ছে। এসব ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪২৫ জন।

৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি চাপায়, ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে দুই বাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে, ৭ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি উল্টে, ৪ শতাংশ ক্ষেত্রে গাড়ি খাদে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় যাদের প্রাণ গেছে, তাদের মধ্যে ৫৬৬ জনই চালক। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১৬০ জন। এছাড়া ৬৪ জন বাসচালক ও ৫৯ জন ট্রাক চালক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন গতবছর।

পুরো বছরের মধ্যে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে জুন মাসে, ৩৮১ জন; আর সবচেয়ে কম নভেম্বরে, ২৪৫ জন।

তবে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কমেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে সড়কে ৫ হাজার ৬৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক ‍দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের এলাকায়। ৩৩৯টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪৬ জনের।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বড় বড় শহর ও হাইওয়েতে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন, ভ্যান, রিকশা, নসিমন, অটোরিকশা এর জন্য দায়ী।

“আইন অমান্য করে ধীর গতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে।”

সংবাদ সম্মেলনে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশি কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের পাশাপাশি স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সড়ক ‍দুর্ঘটনা রোধের বিষয়গুলো অন্তুর্ভুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।

ট্রাফিক নির্দেশনা অমান্য করা, যত্র-তত্র গাড়ি রাখা, নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া যাত্রী তোলা বা নামানো, ওভারটেক করা, প্রতিযোগিতা বা বেপরোয়া গাড়ি চালনা, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, ওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস বা জেব্রা ক্রসিং থাকার পরও তা ব্যবহার না করার প্রবণাতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দরিদ্র ও বেকার যুবকদের বিনা বেতনে অথবা ঋণ দিয়ে দক্ষ চালক হিসাবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি উদ্যোগে সব জেলায় একটি করে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

দেশে ১৬ লাখ চালকের চাহিদা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আশা করি শিক্ষিত চালক তৈরিতে সরকার বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, সকল মহাসড়কে এবং প্রধান সড়কে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। উঁচু সড়ক বিভাজক নির্মাণ করে দিতে হবে। মহাসড়ক ও প্রধানসড়কগুলো অন্তত চার লেইনের হতে হবে।

পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করা, যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে তৈরি করা, নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে ফুটপাত দখল বন্ধ করারও সুপারিশ করা হয়েছে সেখানে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “সড়কের ত্রুটিগুলো অচিরেই দূর করতে হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ত্রুটিগুলো দূর করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে গেছে।”

বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে দ্রুত বাস্তবায়ন করলে ২০২০ সারে মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ২০১১ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান।

গত সপ্তাহের শেষে যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল।

বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে তথ্যের এত তারতম্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এ বিষয়ে সরকারকে উদ্যোগী হয়ে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে।

সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় দোষী চালকদের বিচার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিচার হচ্ছে না কারণটা হচ্ছে আমাদের দেশের সরকাররা… আপনারা  জানেন যে পরিবহন সেক্টরের লোকজনকে , সংগঠনকে, নেতাদেরকে খুবই ভয় পায়।  এই ভয় পাওয়ার জন্যই তারা (সরকার) সেভাবে ব্যবস্থা নেয় না এবং আমাদের দেশের মানুষও কিন্তু.....।

“যখনই পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। তখনই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় এবং মানুষ উত্তেজিত হয়ে যায়। সরকার মনে করে এই বুঝি আমার গদি চলে গেল... ভোট মনে হয় সামনে পাইলাম না।

“আমি বলব আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পরপর তিনবারসহ চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। উনার জীবনের আর কিছু পাওয়ার আছে বলে মনে করি না। এখন অন্তত এই সড়কের মড়ক থেকে এ দেশের মানুষকে বাঁচানো জন্য একটা যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়ে .....। আমি মনে আমার যে সাজেশনগুলো, সেগুলো যদি বাস্তাবায়ন করা যায়, অবশ্যই জিরো টলারেন্সের মধ্যে আসবে।”