দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবনতি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘দুর্নীতির ধারণাসূচকে’ বাংলাদেশের অবস্থানের ছয় ধাপ অবনমন ঘটেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2019, 06:32 AM
Updated : 23 Jan 2020, 07:42 AM

বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০১৮ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টিআই মঙ্গলবার এই সূচক প্রকাশ করেছে।

সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৯ নম্বরে। গতবার ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৩ নম্বরে।

আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আগের ১৭তম অবস্থান থেকে নেমে গেছে ১৩তম অবস্থানে।

১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবার ২ পয়েন্ট কমে ২৬ হয়েছে। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

এই সূচকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বাজে অবস্থা কেবল আফগানিস্তানের। অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) আফগানিস্তানের অবস্থান এবার নবম।

এমন এক সময়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এই প্রতিবেদন এল যখন টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলছে। 

সরকার গঠনের পর গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, “আমি জানি, দুর্নীতি নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে অস্বস্তি রয়েছে। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের নিজেদের শোধরানোর আহ্বান জানাচ্ছি। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতি উচ্ছেদ করা হবে।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মঙ্গলবার ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরস্থিতি তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের অবনমনকে ‘বিব্রতকর’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে নিম্ন ও মধ্যম সারিতে ব্যবস্থা নেওয়ায়’ বাংলাদেশ আশানুরূপ উন্নতি করতে পারছে না।

“আমাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে এখন। দল ও পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ দেখানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সংবাদ সম্মেলনে ইতিবাচক হিসাবে বর্ণনা করেন ইফতেখারুজ্জামান।

সেই সঙ্গে এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এজন্য জাতীয় দুর্নীতি বিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা জরুরি বলে আমরা মনে করি। এই ধরনের কৌশল প্রণয়ন করা উচিত এবং এটা করা সম্ভব। ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে না পারলে শূন্য সহিষ্ণুতার বিষয়টি বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।”

 

টিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, তালিকায় এবারও সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া; তাদের স্কোর গতবারের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হলেও অবস্থানের নড়চড় হয়নি।

এরপরে রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, সাউথ সুদান, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া, সুদান, গিনি-বিসাউ, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, আফগানিস্তান ও লিবিয়া

অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৮৮ স্কোর নিয়ে তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে উঠে এসেছে ডেনমার্ক। স্কোর কমায় গতবারের তালিকায়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা নিউ জিল্যান্ড এবার নেমে গেছে দ্বিতীয় অবস্থানে।

এর পরে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, কানাডা ও লুক্সেমবুর্গ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, তাদের এবারের সমীক্ষায় দুই তৃতীয়ংশের বেশি দেশের স্কোর ৫০ এর নিচে। আর প্রতিবেদনের ১৮০টি দেশের গড় স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪৩। 

 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবারের সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। ৬৮ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ২৫ নম্বরে।

এরপর ভারত ৭৮ (স্কোর ৪১), শ্রীলঙ্কা ৮৯ (স্কোর ৩৮), পাকিস্তান ১১৭ (স্কোর ৩৩), মালদ্বীপ ১২৪ (স্কোর ৩১), নেপাল ১২৪ (স্কোর ৩১) এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান ১৭২তম (স্কোর ১৬) অবস্থানে রয়েছে।

২৬ স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানের রয়েছে- সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও উগান্ডা।

অর্থ পাচার ঠেকানোর উদ্যোগ ‘না নেওয়া’, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের অধিকার ‘সঙ্কুচিত হওয়া’ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে ‘না পারা’কে বাংলাদেশের অবনমনের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে।

দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে তারা সরকারের আজ্ঞাবহ নয়, সেই ম্যান্ডেট তাদের আছে। পরিচয় ও অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।”