ডিএনসিসি: মনোনয়নপত্র জমা দিতে অনাগ্রহ বেশি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে এক বছর আগে যারা মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন, তাদের অনেকেরই জমা দেওয়ার বিষয়ে অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2019, 05:17 PM
Updated : 27 Jan 2019, 05:18 PM

বিএনপি এই ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে নতুন তফসিলের পর মনোনয়নপত্র তোলার ক্ষেত্রেও তেমন সাড়া দেখা যাচ্ছে না।

আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য ডিএনসিসিতে মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের জন্য গত বছর তফসিল হলেও আদালতে তা আটকে গিয়েছিল।

সম্প্রতি আদালতের সায় পাওয়ার পর আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২২ জানুয়ারি পুনঃতফসিল দেওয়া হয়েছে। তবে গত বছর যারা মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন, তাদেরগুলোও বহাল থাকছে।

রোববার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী আনিসুর রহমান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

২০১৮ সালের তফসিলে আরও ১৯ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে ২১ জন মনোনয়নপত্র নিলেন, যারা প্রার্থী হিসেবে থাকতে হলে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে।

এই নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল রোববার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখনও মেয়র পদে কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

তবে আতিক ও আনিস বুধবারের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানান তিনি।

আগেরবারের যারা

সেলিম উদ্দিন (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ শাফিন আহমেদ (এনডিএম), এইচ বি এম ইকবাল (আওয়ামী লীগ), মোহাম্মদ ফজলে বারী মাসউদ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), স্বাধীন আক্তার আইরিন (স্বতন্ত্র), শাকিল ওয়াহেদ (বিএনপি),  মো. মাসুম বিল্লাহ (এনপিপি),  রবিন কুমার পাল (ডিজিটাল আওয়ামী লীগ), গাজী ইয়াকুব (ইসলামী ঐক্যজোট), এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম (বিএনএফ), আবুল কালাম আজাদ (জাতীয় বিপ্লবী পার্টি), আনিসুজ্জামান খোকন (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ ওসমান গণি (আওয়ামী লীগ), মুরসালিন হায়দার (স্বতন্ত্র), ফারুক আহমেদ (স্বতন্ত্র), এইচ এম গোলাম রেজা (স্বতন্ত্র), খালেদা খানম রুনু (বাংলাদেশ সত্যব্রত আন্দোলন), জোনায়েদ সাকি (স্বতন্ত্র) ও জিল্লুর রহমান চৌধুরী (স্বতন্ত্র)।

এর বাইরে বিএনপি তখন তাবিথ আউয়ালকে প্রার্থী ঘোষণা করলেও তিনি মনোনয়নপত্র কেনার আগেই ভোট আটকে গিয়েছিল। সেবার আওয়ামী লীগ ঘোষিত প্রার্থী আতিকও মনোনয়নপত্র কিনতে পারেননি।

এবার আতিক মনোনয়নপত্র নিলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি নেতা শাকিল ওয়াহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দল তো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে; এজন্য আর মনোনয়নপত্র জমা দেব না।”

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি। সোমবারের মধ্যে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। আমি হলে তো বাম জোটের প্রার্থী হব।”

এদিকে বাম জোটের প্রার্থী হতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ সাজেদুল হক রুবেল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবারের মধ্যে এ বিষয়ে দলগত সিদ্ধান্ত জানাতে পারব আশা করি।”

ইসলামী আন্দোলনের শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের পর এখন আর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তাদের অনীহা রয়েছে।

“যেভাবে ৩০ ডিসেম্বর ভোট হল, তারপর ঢাকার এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে নেই দলের। তবে দিন-দুয়েকের মধ্যে আমি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাব। আমার প্রস্তুতি রয়েছে। এখন দল বললে অংশ নেব, না বললে নেই।”

আতিকুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক মিজানুর রহমান রোববার উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব মো. আবুল কাসেমের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার কথা জানান সাবেক সংসদ সদস্য এইচ বি এম ইকবাল।

তিনি বলেন, “গত বছর তো আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ছিল, তাই মনোনয়নপত্র নিয়েছিলাম। এখন একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে; তাই আমি আর জমা দিচ্ছি না।”

আওয়ামী লীগের হয়ে তৎকালীন প্যানেল মেয়র মো. ওসমান গণিও মেয়র পদে ভোট করতে মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে মারা যান তিনি।

ব্যান্ডশিল্পী শাফিন আহমেদও এনডিএম নামের একটি দলের হয়ে ভোট করতে মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন।

গত বছর মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ

এবারের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এনডিএম তো নিবন্ধন পায়নি। আমি স্বতন্ত্রভাবে বা কোনো দলের হয়ে ভোট করব কি না, সিদ্ধান্ত নিইনি। সোমবার নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জানাতে পারব।”

বিকল্পধারার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক সাংসদ এইচ এম গোলাম রেজা একাদশ সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় ভোট করে হেরেছেন। মেয়র পদে ভোট করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিও নেননি।

“জনগণ আমার সঙ্গে রয়েছে; তবুও সাতক্ষীরা-৪ আসনে আমি হেরে গেছি। কীভাবে হেরেছি, তা সবাই জানে। এখন ঢাকায়ও কি একই রকম ভোট হবে কি না, জানি না। সোমবার দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

তবে ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী গাজী ইয়াকুব ভোটে থাকার কথা জানালেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত বছর মনোনয়ন কেনার সময় সিডির জন্য ২৭ হাজার টাকা ও জামানতের ১ লাখ টাকার ভাউচার রেডি ছিল আমার। পরে ভোট স্থগিত হয়। এবার ভোটের জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। শিগগির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মনোনয়নপত্র জমা দেব।”

এনপিপির মাসুম বিল্লাহ জানান, এবার তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় মেয়র পদে ভোট করতে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন না। তবে দলের সভপতি আনিসুর রহমান ভোট করবেন।

বিএনএফের কামরুল ইসলাম মনোনয়নপত্র নিয়েও ভোট নিয়ে অনীহা থাকায় জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।

স্বাধীন আক্তার আইরিনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের পরিকল্পনা থাকলেও এখন আর তা করবেন না।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ করি। দল একজনকে মনোনয়ন দিয়েছে। দেখি সামনে কী করা যায়। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে এখনও কষ্টে জীবনযাপন করছি। ভোটের কথা পরবর্তীতে চিন্তা করব।”

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে একসঙ্গে নির্বাচন হয়েছিল। আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পূদ শূন্য হয়েছিল ২০১৭ সালের নভেম্বরে।

নির্বাচন ভবন

ওই পদে উপ নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটির নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য গতবছর তফসিল ঘোষণা করে ইসি।

কিন্তু আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে সেই ভোট এতদিন আটকে ছিল। সম্প্রতি আদালতের স্থগিতাদেশ উঠে গেলে ঢাকা সিটির এ নির্বাচনের পথ তৈরি হয়।

নতুন তফসিল (২২ জানুয়ারি) অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোট হবে। এর আগে ৩০ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন রয়েছে। বাছাই ২ ফেব্রুয়ারি ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ফেব্রুয়ারি।

কাউন্সিলর পদে আগ্রহ

গত বছর সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪১২ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮১ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন।

৯ নম্বর ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে শূন্য পদে উপনির্বাচন হচ্ছে।

উপ নির্বাচনসহ সব মিলিয়ে এবার সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৮ জন এবং সংরক্ষিত পদে ১৮ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বলে জানান সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল।

ঢাকা দক্ষিণে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মোট ৩৬৫ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ১৭ জন জমা দিয়েছেন।

মেয়াদের বাকি সময়ের জন্য জনপ্রতিনিধি

প্রায় দুই বছর ধরে ওই দায়িত্ব পালনের মধ্যেই ২০১৭ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিসে আক্রান্ত আনিসুল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে বছর ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।

আতিকুল ইসলাম হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ থাকে শপথ নেওয়া জনপ্রতিনিধিদের।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ভোটের পর মেয়র হিসাবে মে মাসে শপথ নেন আনিসুল হক। আর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা থেকে পাঁচ বছর মেয়াদ থাকে জনপ্রতিনিধিদের।

ইসি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, উপনির্বাচনে যিনি মেয়র হবেন, তিনি ওই মেয়াদের বাকি সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন।

সেক্ষেত্রে নতুন যোগ হওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদও মেয়রের মতো সিটি করপোরেশনের বাকি সময়ের জন্য হবে বলে জানিয়েছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক।