গুলশান হামলা: সাক্ষ্য নিয়ে অবহেলার অভিযোগ

হলি আর্টিজান মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের ‘অবহেলার’ অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানালেন সাক্ষ্যগ্রহণ দেখতে আসা কয়েকজন আইনজীবী।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 03:34 PM
Updated : 23 Jan 2019, 03:35 PM

বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে চার জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

এরা হলেন- গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারির মালিক সাদাত মেহেদী, তার স্ত্রী সামিরা আহম্মেদ, পাশের লেকভিউ ক্লিনিকের ক্যান্টিন ম্যানেজার আব্দুল হাকিম এবং হলি আর্টিজানের শেফ মো. আকাশ খান।

সাক্ষীদের মধ্যে সামিরা আহম্মেদ ও আকাশ খান আদালতে নাম-ঠিকানা লেখার পর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের ‘টেন্ডার‘  ঘোষণা করে। এর অর্থ হল, তারা পূর্ববর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্যই সমর্থন করছেন, নিজেরা কিছু বলবেন না।

প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের এভাবে ‘টেন্ডার‘  ঘোষণা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হয় এটি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর অদক্ষতা, নয়তো অবহেলা। এসব স্পর্শকাতর মামলা যত্ন নিয়ে করলে এগুলো হত না।”

ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী সাক্ষীকে ‘কখনই টেন্ডার ঘোষণা করা উচিৎ নয়’ মন্তব্য করে ফৌজদারি মামলায় অভিজ্ঞ দুলাল মিত্র বলেন, ” এতে করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ পড়ে যেতে পারে যা মামলা প্রমাণের জন্য ভালো নয়। বিচারের জন্যও ভালো নয়। রাষ্ট্রপক্ষের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার।”

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্তকালীন পর্যায়ে পুলিশের কাছে দেওয়া কোনো সাক্ষীর জবানবন্দির সঙ্গে যদি অন্য সাক্ষীর জবানবন্দি মিলে যায়, সেক্ষেত্রে পরের সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আগের সাক্ষীর বক্তব্য এবং আর তার বক্তব্য একই বলে মনে করতে পারেন। তাহলে ওই সাক্ষীকে টেন্ডার ঘোষণা করলে মামলার ক্ষতি হবে না।”

তবে বুধবারের শুনানিতে উপস্থিত না থাকায় ট্রাইব্যুনালে কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে অবগত নন বলে দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের এ জ্যেষ্ঠ কৌঁসুলি।  

এ মামলায় বাদীর জেরায় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় বাদ পড়ায় এর আগে পুনরায় তার সাক্ষ্য নেওয়ার আবেদন করতে চেয়েছিলেন আবদুল্লাহ আবু।

১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জবাই ও গুলি করে হত্যা করে পাঁচ তরুণ।

বুধবারের শুনানিতে সেই রাতের ভয়াবহতার বর্ণনা দেন হলি আর্টিজান বেকারির মালিক সাদাত মেহেদী।  

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে হামলার সময় তিনি ছিলেন আরেক রেস্তোরাঁ ইজুমিতে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বেকারির ম্যানেজার সেজাদ ফোন করে তাকে হামলার খবর দেন। সেজাদ তাকে বলেন, হামলাকারীরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে গুলি চালাচ্ছে।

“তখন আমি সাথে সাথে হলি আর্টিজানে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পুলিশের গাড়ি দেখতে পাই। … এরপর আমার সামনে দিয়ে আহত দুইজনকে পুলিশ হাসাপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার গোলাগুলি শুরু হয়।”

মেহেদী বলেন, “আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তখন কে কী করবে ঠিক পাচ্ছিল না। যুদ্ধের মতো অবস্থা শুরু হয়ে যায়।“

ওই অবস্থায় সেখানে অবস্থানরত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয় মেহেদী। বেকারির ভেতরে কোথায় কে ডিউটিতে আছে, সেই তথ্য তিনি পুলিশকে দেন। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “ওই ঘটনায় আমার পাঁচজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারা যায়।”

লেকভিউ ক্লিনিকের ক্যান্টিন ম্যানেজার আব্দুল হাকিম তার জবানবন্দিতে বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তিনি।

“বোমার আওয়াজ শুনে আমাদের নিরাপত্তা প্রহরী নূর আলম ও হোসেন মেইন গেট দিয়ে ভিতরে চলে আসে। এরপর সেখানে সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে।”

পরে ক্লিনিকের ভেতর গিয়ে একটি জায়গা নিরাপদ হতে পারে মনে করে সেখানে আশ্রয় নেন বলে জানান হাকিম।

গত ৩ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর এ মামলায় প্রসিকিউশনের মোট ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হল।

আরও খবর