ভালোবাসার অশ্রু আর ফুলে সুরস্রষ্টাকে বিদায়

কালজয়ী অনেক গানের সুরস্রষ্টা, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।

গ্লিটজ প্রতিবেদকনিজস্ব ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 09:38 AM
Updated : 23 Jan 2019, 10:00 AM

বুধবার সকালে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসা সহকর্মীরা যেভাবে কাছের মানুষের বিদায়ে চোখের জলে ভেসেছেন, সেভাবে সাধারণ মানুষও এসেছে তার সুরের টানে।

‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’র মত কালজয়ী সব গানের সুরস্রষ্টা সঙ্গীতাঙ্গনে দীর্ঘ চার দশকের পথচলা শেষ করে সুরের মায়া কাটিয়ে মঙ্গলবার ওপারে পাড়ি জমান।

সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমাগার থেকে বুধবার সকাল ১১টায় বুলবুলের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়।

শুরুতে পুলিশের একটি দল ‘গার্ড অব অনার’ দেয় মুক্তিযোদ্ধা বুলবুলকে, ছাত্রাবস্থায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

এরপর রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সহকারী সামরিক সচিব ইফতেখারুল আলম।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদেন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ সংস্কৃতি; ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতাঙ্গনের অনেকে।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেন, “আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল শুধু গানের জন্য নয়, দেশের প্রতি যে অবিস্মরণীয় ভালোবাসা দেখিয়েছেন তা ভোলার নয়।”

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসালমীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “যার কারণে পরে তার ভাই খুন হন। তারও প্রাণনাশের হুমকি ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কারণে তিনি সাহসে অবিচল ছিলেন।”

বুলবুলের সহশিল্পীদের মধ্যে গাজী মাজহারুল আনোয়ার, কুদ্দুস বয়াতী, খুরশীদ আলম, মনির খান, কুমার বিশ্বজিৎ শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।

তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাসদসহ বিভিন্ন সংগঠন।

সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে বুলবুলের দেশপ্রেমকে স্মরণ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি লালন করে গেছেন। তিনি যুদ্ধের বিশ্বাস, চেতনাকে শক্তিতে রূপান্তর করতে পেরেছিলেন।”

শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। বাদ জোহর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা।

জানাজা শেষে বুলবুলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। সেখানেও তার অনেক সহকর্মী কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে হয় তার দ্বিতীয় জানাজা।

চল্লিশ বছরের সঙ্গীত জীবনে মরণের পরে, আম্মাজান, প্রেমের তাজমহল, অন্ধ প্রেম, রাঙ্গা বউ, প্রাণের চেয়ে প্রিয়, পরেনা চোখের পলক, তোমাকে চাই, লাভ স্টোরি, ভুলোনা আমায়, আজ গায়ে হলুদ, লাভ ইন থাইল্যান্ড, আন্দোলন, মন মানে না, জীবন ধারা, সাথি তুমি কার, হুলিয়া, অবুঝ দুটি মন, লক্ষ্মীর সংসার, মাতৃভূমি, মাটির ঠিকানাসহ দুইশতাধিক চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন বুলবুল।

‘প্রেমের তাজমহল’ সিনেমার জন্য ২০০১ সালে এবং ‘হাজার বছর ধরে’ সিনেমার জন্য ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার হাতে ওঠে তার।

বিকালে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে দাফন করা হবে বরেণ্য এই সঙ্গীত পরিচালককে।