বনানীর ধর্ষণ: দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি ছাড়া ফিরলেন অভিযোগকারী তরুণী

বনানীর আলোচিত ধর্ষণ মামলায় আদালতে হাজির হয়েও আসামিপক্ষের আইনজীবী না থাকায় শুনানি ছাড়া ফিরে গেছেন অভিযোগকারী এক তরুণী।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2019, 06:23 PM
Updated : 4 Sept 2019, 04:32 PM

এ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে তার মা আদালত প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন,  সাক্ষ্য দিতে এ নিয়ে পাঁচ দিন তার মেয়েকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে এসেছেন। তার মধ্যে দুই দিন সাক্ষ্য হয়নি।

“মেয়ে নতুন একটি জবে ঢুকেছেন। নিজেও ঢাকার বাইরে চাকরি করি। এভাবে মাসে তিন-চার বার কীভাবে ট্রাইব্যুনালে আসা সম্ভব? ”

এ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি ফারজানা আহমেদ অরেঞ্জ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলায় নাঈম আশরাফের পক্ষে জেরার জন্য আজ দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তার আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন এ মামলা ছেড়ে দিয়েছেন।

“যে কারণে অন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হবে বলে আজ নাঈম সময় চেয়েছেন।”

আসামিদের মধ্যে শুধু নাঈম আশরাফই এখন কারাবন্দি

আসামি নাঈম আশরাফ মৌখিকভাবে সময় আবেদন করলে ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. খাদেম উল কায়েস আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন তারিখ ঠিক করেন। 

এর আগে গত ১৫ জানুয়ারিও শুনানির জন্য আদালতে হাজির হয়েছিলেন ওই তরুণী। তবে কারাগার থেকে আদালতে আসামিদের বহনকারী প্রিজন ভ্যান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নাঈম আশরাফকে আদালতে আনতে না পারায় শুনানি পিছিয়ে যায়।

এ মামলার পাঁচ আসামির মধ্যে একমাত্র নাঈমই কারাবন্দি আছেন। সর্বশেষ গত গত ২৯ নভেম্বর প্রধান আসামি সাফাত আহমেদকে জামিন দেয় এই আদালত।

সাফাতের জামিন বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি এদিন হলেও আদেশ দেননি বিচারক।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুনানিতে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু ও বিশেষ পিপি মো. লিয়াকত আলী এবং ভিকটিমের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ।

জামিন বাতিলের পক্ষে তারা যুক্তি দেন, আসামির অসুস্থতার গ্রাউন্ডে ট্রাইব্যুনাল সাফাতের জামিন মঞ্জুর করে। কিন্তু তাকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি। তাই তার জামিন বাতিল করা প্রয়োজন।

জামিন বাতিল না হলে সাফাত সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রভাবিত করতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

অন্যদিকে ওই আসামির আইনজীবী মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা সাফাতের জামিন স্থায়ীর আবেদন করেন।

তখন বিচারক বলেন, তিনি দেখে আদেশ দেবেন।

শুনানির সময় আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত, তার বন্ধু নাঈম ও সাদমান সাকিফ এবং সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষ্য দিতে আসা ওই তরুণীর মা বেরিয়ে যাওয়ার সময় উদ্বেগ জানিয়ে আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, “মামলাটিতে এক এক করে আসামিরা জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। হাতে জীবন নিয়ে আদালতে আসি। আর যে আসামি কারাগারে রয়েছেন তিনি জামিন পেলে তাদের জীবন আরও সংশয়ে পড়বে।”

সাফাতের আগে বিভিন্ন সময় হাই কোর্ট থেকে জামিন পান সাদমান সাকিফ, রহমত আলী ও বিল্লাল হোসেন।

জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়।

ঘটনার মাসখানেক পর ৬ মে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হলে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে সাফাতসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি এ মামলায় ঢাকার হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন। বাদীপক্ষে মোট ৪৭ জনকে সাক্ষী করেন তিনি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাফাত ও নাঈম ধর্ষণে সরাসরি অংশ নেন এবং বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন।