সংসদে সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে পারবেন হিজড়ারাও

নারী পরিচয়ে নিবন্ধিত হিজড়াদের সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2019, 06:02 PM
Updated : 22 Jan 2019, 06:05 PM

মঙ্গলবার বিকালে কমিশন সভা শেষে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

তিনি বলেন, এ সম্প্রদায়ের নারীদের সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে বাধা নেই।

“হিজড়া সম্প্রদায়কে গেজেট নোটিশ করা আছে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে। ভোটার তালিকায় তাদের কারো নাম নারী হিসেবে গণ্য করা থাকলে তারা কিন্তু সুযোগ পাবে।”

তবে ভোটার তালিকায় পুরুষ হিসেবে নাম লেখা হলে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকছে না বলে জানান তিনি।

২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ পরিচয়কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করা হয়।

পরের বছর ভোটার নিবন্ধন বিধিমালা প্রণয়নের সময়ই নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন ফরমে লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে হিজড়া যুক্ত করে।

এরপরও হিজড়ারা এখন ভোটার তালিকায় রয়েছে ‘নারী’ বা ‘পুরুষ’ পরিচয়ে। একাদশ নির্বাচনের আগেও হিজড়াদের জন্য আলাদা ভোটার তালিকা তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশন থেকে এর আগে বলা হয়, ভোটার তালিকা বিধিমালা সংশোধন করে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটের তফসিল ঘোষণার সময় দুই সপ্তাহ এগিয়ে আনা হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, “১৭ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল। যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই আমরা এটা এগিয়ে এনে সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ ঘোষণা করব।”

সংরক্ষিত নারী আসনে ভোটাভুটির প্রয়োজন থাকে না বলে তফসিল ঘোষণাও এগিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সংরক্ষিত ৫০ আসনের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের দল ও জোটগত অবস্থান জানাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

৩০ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তফসিল ঘোষণার আগে এ নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।

আইন অনুযায়ী, সংসদের সাধারণ আসনে শপথগ্রহণকারী ব্যক্তিরাই সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে ভোটার হবেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ২৯৯ আসনে নির্বাচিতদের নাম-ঠিকানাসহ গেজেট  প্রকাশিত হয়েছে গত ১ জানুয়ারি ।

সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের ভোট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বিএনপি ও গণফোরাম এখনও শপথ না নিলেও তাদের অবস্থান জানার পর করণীয় নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশন।

গেজেটের ২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৭টি, জাতীয় পার্টি ২২টি, বিএনপি ৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাসদ ২টি, গণফোরাম ২টি, বিকল্পধারা ২টি, তরিকত ফেডারেশন ১টি, জেপি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জিতেছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়।

ভোটারদের তথ্য সংগ্রহে নিবন্ধন ফরমের ১৭ নম্বর ক্রমিকে ‘লিঙ্গ পরিচয়’ ছকে এ যোগ হচ্ছে ‘হিজড়া’

এই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১টি সংরক্ষিত আসন পেতে পারে।

৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপরীতে দল ও জোটগতভাবে সমান সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে।

ইসি সচিবের সংবাদ সম্মেলনের আগে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ৪৩তম কমিশন সভা হয়।

দেশের বাইরে অবস্থান করায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কবিতা খানম এ সভায় উপস্থিত ছিলেন না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসির যুগ্মসচিব আবুল কাসেম, মোস্তফা ফারুক, ফরহাদ আহাম্মদ খান, আব্দুল বাতেন এবং এস এম আসাদুজ্জামান।