ব্যবসায়ী বাদল ও তার স্ত্রীর সম্পদ জব্দ

আদালতের আদেশে ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল এবং তার স্ত্রী সোমা আলম রহমানের নামে থাকা কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2019, 05:26 PM
Updated : 20 Jan 2019, 07:38 PM

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাদল ও তার স্ত্রীর সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করতে গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আদালত, নারায়ণগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ও নরসিংদী জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করলে সম্প্রতি এসব আদালত থেকে জব্দের বিষয়ে নির্দেশনা আসে।

আদালত থেকে তাদের সব সম্পদ জব্দ করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরপর তাদের সব সম্পদ জব্দ করা হয় বলে জানান দুদকের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেইন মৃধা, যিনি এই দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। জব্দ করা বাদল-সোমার সম্পদের বিবরণও দিয়েছেন তিনি।

এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঢাকার বনানীর পুরাতন ডিওএইচএসের ৫ নম্বর সড়কের ৬৮ নম্বর বাড়ি, বাড়িধারা মডেল টাউনের তিন তলা একটি বাড়ি, ধানমন্ডির রয়েল প্লাজা, বনানীর গলফ হাইটস, গুলশানের ভাটারার বাড়ি এবং কাকরাইল ও রমনার জমি।

এছাড়া বাদলের সাউথ ইস্ট ব্যাংকের একক ও যৌথ হিসাব, ওয়েসিস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডে ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, সিনক্লিয়ার ফার্মাসিটিক্যালের ১ লাখ টাকার শেয়ার, লতিফ সিকিউরিটিজস লিমিটেডের ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, বিসি কর্পোরেশনের ৫০ হাজার টাকার শেয়ার, ডায়াপার লিমিটেডের ৬০ লাখ টাকার শেয়ার, বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশনের ১ কোটি টাকার শেয়ার, আল মানার হাসপাতালের ৬৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার, ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৪১ লাখ ৮১ টাকার শেয়ার এবং অন্যান্য সম্পদ জব্দের তালিকায় রয়েছে।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীসহ বিভিন্ন জায়গায় এ দম্পতির নামে থাকা কয়েক কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম লুৎফর রহমান বাদল। বলা হয়, পুঁজিবাজার থেকেই বিত্তশালী হয়ে ওঠেন তিনি। পুঁজিবাজারে কারসাজির ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে তার নাম এসেছে। বাদল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও পরিচিত।

২০১৪ সালের অক্টোবরে ভারতের ক্রিকেট তারকা শচীন টেন্ডুলকারকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসেন ‘লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ’-এর চেয়ারম্যান বাদল

২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর বাদলকে আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৭ সালের ২৮ ও ২৯ মে বাদল ও তার স্ত্রী সোমার বিরুদ্ধে রমনা থানায় পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।

মামলার এহাজারে বলা হয়, বাদলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১৩০ কোটি ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৩৯৬ টাকা। আর তার স্ত্রী সোমার সম্পদের পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৯৭ টাকা।

মামলায় বাদলের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ৫৯ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং দুই লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৩ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।

আর সোমার বিরুদ্ধে মামলায় আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ প্রায় ৯৩ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন এবং সোয়া ২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ করা হয়।

তদন্তে বাদল ও সোমার নামে ওই সব সম্পদের বাইরে আরও ‘বিপুল পরিমাণ’ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা মোশারফ হোসেইন মৃধা জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আসামিরা সম্পদ হস্তান্তরের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব সম্পদ হস্তান্তর করলে বিচারের রায় শেষে সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও জরিমানা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়বে।

“মামলার তদন্তের স্বার্থে এসব সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছিল।”