বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ১৯৫৭ সালের ৩ জানুয়ারি। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টে তার জন্ম তারিখ লেখা ১৯৫৮ সালের ৩ জানুয়ারি।
নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসেন মনির। সুনামগঞ্জ জেলার দৌলতপুর এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে ১৯ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বর্তমানে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে তাকে।
নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত মনিরের মেয়ে মনিরা বাবার যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট সাংবাদিকদের এনে প্রশ্ন তুলেছেন, “১৩ বছর বয়সের কেউ কি রাজাকার হতে পারে?”
এই প্রশ্নের জবাব পেতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
২০ জানুয়ারি মনিরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার তারিখ দিন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মনিরের পক্ষে বিদেশি আইনজীবী লড়তে চাইলে আদালতের অনুমতি লাগবে। অনুমতি ছাড়া সে সুযোগ পাওয়া যাবে না। এটি পুরোপুরি ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার।”
মনিরের বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পরই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান আব্দুল হান্নান।
ট্রাইব্যুনালের আরেকজন তদন্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণের সময় মনিরের মিথ্যা তথ্য প্রদানের ব্যাপারটি এখন মার্কিন অথরিটিকে জানানো হবে।”
নিউ ইয়র্কে মনিরের ছোট মেয়ে শ্রাবণী মনির সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা ১৯৮২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। ১৯৯১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পান। নিউ ইয়র্কে ছোটখাটো একটি ব্যবসা পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, তার বাবা ১৮ নভেম্বর নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে যান। তার ফিরে আসার কথা ছিল ৭ জানুয়ারি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বাবা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, “১৯৬৯ সালে যখন তার বয়স ১১ বছর, তখন তিনি তার এক আঙ্কেলের সঙ্গে বসবাস করছিলেন পাকিস্তানের লাহোরে। সেখানকার স্কুলে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের অক্টোবরের আগে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেননি। এর দুই মাস পরে যুদ্ধ শেষ হয়।”
তবে তার দাদা আবদুল খালিক মনির ১৯৭১ সালে এলাকায় প্রভাবশালী জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন বলে স্বীকার করেন শ্রাবণী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতার জন্যে তাকে ডিসেম্বরেই হত্যা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ কারণেই তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন শ্রাবণ।
তবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ উল মালুম আল সাংবাদিকদের বলেছেন, মনিরের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় সুনামগঞ্জের শাল্লা ও দিরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, আটকে রাখা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
“সে রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিল।”