জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত মমতাজউদদীন আহমদ

জন্মবার্ষিকীতে অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদকে ফুলেল শুভেচ্ছার পাশাপাশি শ্রদ্ধার সঙ্গে নাটকে তার অবদান স্মরণ করেছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের শীর্ষস্থানীয়রা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2019, 06:07 PM
Updated : 18 Jan 2019, 06:12 PM

গুনী এই নাট্যকারের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যার পর বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আনন্দ আয়োজন করে ‘অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ ৮৫তম জন্মদিন উদযাপন জাতীয় পর্ষদ’। 

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজীর সভাপতিত্বে এই আয়োজনে উপস্থিত হন ভাষা সৈনিক কামাল লোহানী, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, নওয়াজেস আলী খানসহ অনেকে।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মমতাজউদদীন ফুল, উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও পোর্টেট দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সুজিত রায় নন্দী, বাংলা একাডেমির পক্ষে শুভেচ্ছা জানান হাবিবুল্লাহ সিরাজী, বাংলাদেশ আইন কমিশনের পক্ষে বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, থিয়েটার, আরটিভি পরিবার, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা, সময় নাট্যদল, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, কণ্ঠশীলন, ঢাকা পদাতিক, সুবচন, ঋষিজ শিল্পগোষ্ঠী, পরম্পরা, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ অনেক সংগঠন। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে মমতাজউদদীন আহমদের নাটকে অভিনয় করা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “মমতাজ স্যারের ৮৫তম জন্মদিন। স্যারকে নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। বিশাল পটভূমি জুড়ে তার উপস্থিতি। তিনি তার নাটকের মধ্য দিয়ে দেশ, দেশের মানুষ ও বাঙালির অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমরা যখন চট্টগ্রামে নাটক করতে যেতাম তখন স্যার আমাদের ভুল ধরতেন না বরং উৎসাহ দিতেন।

“উনি বলতেন, একটা মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে,  আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ শুরু হল। এই মুক্তিযুদ্ধ অসাম্প্রদায়িকতা, যুদ্ধাপরাধ, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে, বাঙালি সংস্কৃতির পক্ষে। সেই লড়ইয়ের শুরু থেকে অধ্যাপক মমতাজউদদীন স্যার আমাদের চেতনার বাতিঘর হয়ে  আছেন।"

রামেন্দু মজুমদার বলেন, “অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাটকপাগল একজন মানুষ। নাটক ও লেখার জন্য যখন যেখানে যেতেন সেখানে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন লেখার চেষ্টা করবেন। তাহলে আমরা উপকৃত হব। এই জন্মদিনে তার নিরোগ জীবন কামনা করি।"

হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “জন্মদিনে মমতাজউদদীন আহমদকে নানান পেশার মানুষ শুভেচ্ছা জানাতে এসেছে। এত পেশার মানুষ যখন একজন মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন তখন তাকে একজন মনীষী হয়ে উঠতে হয়। আমি বিবেচনা করি মমতাজউদদীন আহমদ একজন মনীষী পর্যায়ের মানুষ। তিনি আজীবন যে কাজ করে গেছেন তা ধারণ করাই হবে তার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন।”

মমতাজউদদীন আহমদের ছেলে ডা. তিতাস মাহমুদ বলেন, “ এখানে আছেন আমার সর্বংসহা মা, যিনি ক্ষয়ে যেতে যেতে এই আলোটিকে (অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ) ধরে রেখেছেন। আমার মায়ের জন্য, আমাদের জন্য, এদেশের জন্যেও আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে বাবা।”

তিনি বলেন, “আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করতে চাই, প্রতিবছর একজন নাট্যকর্মীকে আব্বার নামে একটা পুরষ্কার দিতে চাই আমরা। আব্বার ইচ্ছা অনুযায়ী 'বাংলাদেশের পক্ষের' একজন নাট্যকর্মীকে এক লক্ষ টাকা সমমূল্যের পুরস্কার দিতে চাই।"

জন্মবার্ষিকীতে নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

মমতাজউদদীন আহমদের বন্ধু ও ভাষা সৈনিক কামাল লোহানী বলেন, “মমতাজউদদীন ও আমি বয়সে কাছাকাছি। দুজনের যে সম্মিলন তা ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে। বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনের সময়ে আমাদের যে বন্ধুত্ব ছিল, তা এখনো অক্ষুন্ন রয়েছে। আমরা আরো কিছুদিন বাঁচতে চাই।

“২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে যে স্বাধীনতার ঘোষণা এসেছিল সেটার বাংলা অনুবাদ করে দিয়েছিলেন অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ। স্বৈরাচারী এরশাদের সময়ে রওশন এরশাদের সামনেই স্বৈরাচারবিরোধী নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।"

অনুষ্ঠানের সর্বশেষ বক্তা হিসেবে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ বলেন, “খুব ভালো লাগছে আমার। প্রায় হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, আর ভালো লাগছিল না। চিন্তা করতে পারি না, ভাবতে পারি না, পড়তে পারি না, ডায়েরি লিখতে পারি না, বই স্পর্শ করতে পারি না। কী অসহায় অবস্থা আমার!

“কিন্তু আমার পরিবার ও গুণগ্রাহীরা আমাকে বেঁচে থাকতে বলেন। দেশের এই ধুলিকণা আমার ছেড়ে যেতে ভালো লাগে না। আরও বাঁচতে ইচ্ছা করে। আমি একজন সামান্য মানুষ। আপনাদের যে ভালোবাসা পেলাম তার যোগ্য আমি নই। এটাই হয়ত আপনাদের সামনে আমার শেষ আসা। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।"