তালিকাভুক্ত পর্যবেক্ষক না হয়ে টিআইবি কী করে এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করল, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
গত ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার নিজেদের প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি দাবি করেছে, সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত না হওয়ায় এই ভোট ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত।
৩০ ডিসেম্বর ভোট ডাকাতি হয়েছে দাবি করে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তারাও বলে আসছিল, ভোটে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা গত ১০ বছরে বিভিন্ন সময় টিআইবির নানা প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলে আসছে, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির কাজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ভোট নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো তাদের কোনো প্রতিবেদন করতে বলিনি। এ নিয়ে আমাদের করার কিছুই নেই।
“কীভাবে এটা করা হল, এভিডেন্স কীভাবে সংগ্রহ করল? আমাদের কোনো ইলভলভমেন্ট ছিল না এবং ইসির কাছে এ ধরনের কোনো অনুমতিও কেউ নেয়নি।”
ইসির নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণ সংস্থার তালিকায় টিআইবির না থাকার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
টিআইবি জানিয়েছে, গবেষণার জন্য দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৩০০টি আসন থেকে ৫০টি আসন নির্দিষ্ট করে প্রত্যেক আসনে স্থানীয় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে প্রধান দুটি দল বা জোটের প্রার্থী বাছাই করে প্রার্থী ও তাদের কার্যক্রমের ওপর তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এছাড়া কোনো আসনে তৃতীয় কোনো শক্তিশালী প্রার্থী থাকলে তাকেও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১০৭ জন প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যক্রমের ওপর পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানায় টিআইবি।
ইসির নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোটের কথা বললেও টিআইবি নানা অনিয়মের অভিযোগের পাশাপাশি ইসির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশও করেছে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত টিআইবির প্রতিবেদন গণমাধ্যমে এলেও তা ইসিতে পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এখনও টিআইবির কোনো প্রতিবেদন পাইনি। এ নিয়ে লিখিত কোনো প্রতিবেদন পেলে কমিশনের বিবেচনার জন্যে উপস্থাপন করা হবে।”
টিআইবির সার্বিক পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ নিয়ে কোনো মূল্যায়নই করতে চান না নির্বাচন কমিশনার রফিকুল।
তিনি বলেন, “তাদের প্রতিবেদনে আমাদের ও সরকারের কথা থাকবে। কিন্তু আমাদের তো তারা কোনোভাবেই ইনভলভ করেনি, আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তাই এ প্রতিবেদন নিয়ে আমাদের কোনো মূল্যায়ন নেই; তা আমলেও নেওয়ার নেই।
“যদি আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়, তখন এ নিয়ে আমরাও বলব।”
টিআইবি বলেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টি আসনের ৪৭টির মধ্যে ভোটের দিন কোনো না কোনো নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সর্বোপরি আংশিকভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। অনেকক্ষেত্রে ভোটারগণ অবাধে ভোট দিতে পারেননি। আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন হয়েছে।
“নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অবশ্যই ব্যাপকভাবে লজ্জাজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ভূমিকাও ছিল বিতর্কিত।”
সংসদ ও নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য ২০১৬ সালে তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল টিআইবিকে।
পুরনো খবর