এমপিপুত্র রনির মামলায় আবার রায়ের তারিখ

দুই বার রায়ের দিন ঠিক হয়েও ফের শুনানিতে গিয়েছিল এমপিপুত্র বখতিয়ার আলম রনির বিরুদ্ধে জোড়া খুনের মামলাটি; এবার তৃতীয় দফায় ঠিক হল রায়ের তারিখ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2019, 01:13 PM
Updated : 29 Jan 2019, 04:30 PM

আগামী ৩০ জানুয়ারি আলোচিত এই মামলার রায়ের দিন ১৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার ঠিক করে দিয়েছেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ঈমাম।

দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ৪ অক্টোবর এই মামলায় রায়ের দিন ঠিক হয়েছিল। কিন্তু একজন সাক্ষীর জবানবন্দি নতুন করে গ্রহণের আবেদন আসায় মামলাটি ফের শুনানিতে পাঠিয়েছিলেন এই বিচারকই।

ওই সাক্ষ্য নেওয়ার পর আবারও রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মঙ্গলবার আসামি রনির উপস্থিতিতে রায়ের নতুন তারিখ ঠিক করেন তিনি।

তারও আগে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আল মামুন মামলাটির রায়ের জন্য গত বছরের ৮ মে তারিখ ঠিক করেছিলেন।

তারপর আসামিপক্ষের এক আবেদনে মামলাটি বদলি করা হয় দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। তখন এই আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল ঈমাম অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানির প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে রায় পিছিয়ে দিয়েছিলেন।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে ঢাকার নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে আবদুল হাকিম নামের এক রিকশাচালক এবং ইয়াকুব আলী নামের এক অটোরিকশাচালক আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম এবং ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান।

এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ওই বছর ৩১ মে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন এমপি পিনু খানের বাসা থেকে তার ছেলে রনিকে আটক করে জানায়, তিনিই সেদিন গাড়ি থেকে গুলি ছুড়েছিলেন।

নিহত রিকশাচালক হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম (বাঁয়ে) ও নিহত অটোরিকশাচালক ইয়াকুবের স্ত্রী সালমা বেগম

মামলা হওয়ার তিন মাসের মাথায় ২০১৫ সালের ২১ জুলাই রনিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস।

‘খুনের উদ্দেশ্য না থাকলেও’ আসামি জানতেন যে তার গুলিতে কেউ হতাহত হতে পারে- এই যুক্তিতে হত্যার অভিযোগ এনে এ মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেন তিনি।

নিহতদের শরীরে পাওয়া গুলির ব্যালাস্টিক রিপোর্ট, রনির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের প্রতিবেদনসহ মোট ১৫টি আলামত অভিযোগপত্রের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৭ জনকে সাক্ষী করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এরপর ২০১৬ সালের ৬ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে জোড়া খুনের এ মামলায় রনির বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার দ্বিতীয় মহানগর দায়রা জজ সামছুন নাহার।

রনির গাড়িচালক ইমরান ফকির এবং ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা তার দুই বন্ধু ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন।

ঘটনার দিন কালো রঙের যে গাড়ি থেকে রনি গুলি চালিয়েছিলেন, সেটি সংসদ সদস্য পিনু খানের বলে গণমাধ্যমে খবর আসে সে সময়।

রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ ঢাকার হাকিম আদালতে জবানবন্দিতে বলেছিলেন, লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে সাংসদপুত্রই সেদিন গুলি ছুড়েছিলেন।

বখতিয়ার আলম রনি

রনির পিস্তলের গুলিতেই ইয়াকুব ও হাকিমের মৃত্যু হয় বলে পরে ব্যালাস্টিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়ার কথা জানায় পুলিশ।

এই সাংসদপুত্রের গাড়িচালক ইমরান ফকিরকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে সাক্ষী হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।

আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ইমরান বলেন, ওই রাতে সোনারগাঁও হোটেল থেকে রনিকে নিয়ে তিনি মগবাজার মোড় হয়ে ইস্কাটনের বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। সে সময় ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য রাস্তার একপাশ বন্ধ ছিল।

“আমাদের গাড়ির বাঁ দিকে ও পেছনে দুটি ট্রাক ছিল। রাস্তায় ছিল জ্যাম। জ্যামে আটকা থাকা অবস্থায় রনি সাহেব এক পর্যায়ে হাত বের করেন। এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শোনা যায়।”

তবে সাংসদপুত্র রনি আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।

পুরনো খবর