সাফাতের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন

অসুস্থতার প্রমাণ দাখিল না করায় বনানীর ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের জামিন বাতিলের আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2019, 11:31 AM
Updated : 15 Jan 2019, 11:56 AM

এদিকে আলোচিত এই মামলার আসামিদের মধ্যে এখন একমাত্র কারাবন্দি সাফাতের বন্ধু নাঈম আশরাফের জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন তার আইনজীবী।

ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. খাদেম উল কায়েস মঙ্গলবার উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে নথি পর্যালোচনায় পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

গত বছর মে মাসের প্রথম দিকে এই ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর দেশব্যাপী আলোচনা- ক্ষোভের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় আপন জুয়েলার্সের মালিক সাফাত, তার বন্ধু নাঈম ও সাদমান সাকিব এবং সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনকে।

সাফাত ও নাঈমের বিরুদ্ধ ধর্ষণ এবং অপর তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে মামলায় বিচার চলছে। গত ২৯ নভেম্বর সাফাত আহমেদের জামিন মঞ্জুর করেন একই বিচারক। এর আগে বিভিন্ন সময় হাই কোর্ট থেকে জামিন পান সাদমান, রহমত ও বিল্লাল।

সাফাতের জামিন হওয়ার পর বিভিন্ন নারী অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

মঙ্গলবার শুনানিতে সাফাতের জামিন স্থায়ী করার আবেদন করেন তার আইনজীবী মো. হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, বিশেষ পিপি মো. লিয়াকত আলী এবং ভিকটিমের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ তার জামিন বাতিলের আবেদন করেন।

জামিন বাতিলের পক্ষে তারা যুক্তি দেখান, আসামির অসুস্থতার গ্রাউন্ডে ট্রাইব্যুনাল সাফাতের জামিন মঞ্জুর করে। কিন্তু আসামি যে অসুস্থ এ ধরনের কোনো ডকুমেন্ট এখনো আদালতে দাখিল করা হয়নি। তাকে দেখেও অসুস্থ মনে হয়নি। তাই তার জামিন বাতিল করা প্রয়োজন।

জামিন বাতিল না হলে সাফাত সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রভাবিত করতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম জামিনের আবেদনে তার আইনজীবী এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম লিটন বলেন, মামলার আসামি পাঁচজন। নাইম আশরাফ ও সাফাত আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এবং অপর তিনজনের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

“ধর্ষণের অভিযোগ থাকা সাফাত আহমেদসহ চারজনই জামিন পেয়েছেন। সাফাত আহমেদের যে অপরাধ আমার আসামিরও একই অপরাধ। তাহলে আমার আসামি কেন জেলে থাকবেন?”

মামলাটি মিথ্যা, পরিকল্পিত ও সাজানো দাবি করে নাঈমের হাজতবাস বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুরের কথা বলেন এই আইনজীবী।

অপরদিকে নাঈমের জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইজনীবীরা। আসামি নিজেই ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে যুক্তি দেন তারা।

মঙ্গলাবার এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন থাকলেও কারাগার থেকে আদালতে আসামিদের বহনকারী প্রিজন ভ্যান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নাইম আশরাফকে আদালতে আনা যায়নি। সে কারণে সাক্ষী হাজির থাকলেও সাক্ষ্য নেওয়া হয় বলে টাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফারজানা আহমেদ অরেঞ্জ জানান।

একজন ভিকটিম এদিন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন বলেও জানান তিনি। আগামী ২২ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছেন বিচারক।

জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে গত বছর ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। মাসখানেক পর এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে সাফাত ও তার দুই বন্ধু সাদমান সাকিফ ও নাঈম আশরাফ এবং সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ মামলায় গত বছর ৮ জুন ঢাকার হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। বাদীপক্ষে মোট ৪৭ জনকে সাক্ষী করেন তিনি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাফাত ও নাঈম ধর্ষণে সরাসরি অংশ নেন এবং বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন।

গত বছর ১৩ জুলাই তৎকালীন বিচারক সফিউল আজম আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।