সৌদিতে কাজের টাকা নিয়ে স্ত্রীকে হত্যা, বন্ধুদের নিয়ে লাশ গুম

সপ্তাহখানেক আগে গাজীপুরে নিহত আফরোজা বেগমের স্বামী ও তার দুই বন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব বলছে, সৌদি আরবে কাজ করে আসা ওই নারীর টাকার হিসাব নিয়ে ঝগড়া থেকে তাকে হত্যা করে স্বামী শাহজাহান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2019, 06:06 PM
Updated : 11 Jan 2019, 06:14 PM

শ্বাসরোধে হত্যার পর শাহাজাহান তার দুই বন্ধু মুকুল ও খোকন মিয়াকে নিয়ে আফরোজার লাশ বাসার সেপটিক ট্যাংকে ফেলেন। পরে এই মুকুল ও খোকনই নিজেদের রক্ষায় প্রত্যক্ষদর্শী সেজে লাশ গুমের খবর প্রকাশ করে।    

গত শনিবার ভোরে গাজীপুর শহরের ভাওরাইদ উত্তরপাড়ার একটি বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে আফরোজার (২৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, ট্যাঙ্কি থেকে আফরোজা বেগম মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে আফরোজার স্বামী শাহজাহান পলাতক ছিল।

সে সময় পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, নিহতের গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন রয়েছে। দাম্পত্য কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

শুক্রবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এ অধিনায়ক সারওয়ার বিন কাশেম আফরোজার স্বামী শাহজাহান এবং তার বন্ধু মুকুল ও খোকনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান।

তিনি বলেন,  “৪ জানুয়ারি রাতে আফরোজাকে হত্যার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলেও শাহজাহান স্বীকার করেছে, আফরোজাকে ৩ জানুয়ারি সকালে স্বাসরোধে হত্যার পর মৃতদেহ বাসায় খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে।

“পরে তার বন্ধু মুকুল ও খোকনকে রাতে ডেকে এনে তিনজন বাসা থেকে কিছু দূরে সেপটিক ট্যাঙ্কিতে আফরোজার মৃতদেহ ফেলে দেয়।”

এ কাজের জন্য মুকুলকে চার হাজার এবং খোকনকে আড়াই হাজার টাকা দেন শাহজাহান।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “মুকুল ও খোকন ঘটনার পর পর বুঝতে পারে যে, শাহজাহান ধরা পড়লে নিজেদেরও বিপদ আছে। তাই শাহজাহান আফরোজার লাশ সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়ার সময় তারা দেখেছে এমন প্রদক্ষ্যদর্শী সাজে এবং স্থানীয় কাউন্সিলরকে তাদের সাজানো ঘটনাটি বলে।”

বৃহস্পতিবার বিকালে ডেমরা থেকে শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের পর তিনি মুকুল ও খোকনের সহযোগিতার বিষয়টি প্রকাশ করেন বলে জানান তিনি।

পরে মুকুল ও খোকনকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

“মুকুল ও খোকন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টাকার বিনিময়ে আফরোজার মৃতদেহ ওই ট্যাঙ্কে ফেলতে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছে,” বলেন র‌্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার বিন কাশেম।

মুকুল গাজীপুর থেকে মাওনা সড়কে লেগুনা চালান এবং খোকন একটি খাবার হোটেলে কাজ করেন বলে জানান তিনি।

র‌্যাব জানায়, নিহত আফরোজা গাইবান্ধা সদর উপজেলার জিকাবাড়ি এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। শাহজাহান মিয়ার বাড়ি জামালপুরের সানন্দবাড়ির মণ্ডলপাড়া এলাকায়।

আফরোজা গাজীপুরের সালনা এলাকায় শ্যামলী পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। আর শাহজাহান জোলারপাড় এলাকায় একটি স্টিল মিলে চাকরি করেন।

আট বছর আগে সুতার মিলে কাজ করার সময় শাহজাহান ও আফরোজার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের ঘরে ছয় বছরের একটি মেয়ে আছে।

সারওয়ার বলেন, ঘটনার সময় তাদের সন্তান অন্য ঘরে ছিলেন।

“২০১৬ সালে আফরোজা কাজের উদ্দেশে সৌদি আরবে যান এবং গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ফিরে আসেন। স্ত্রীর কাছে বিদেশে অর্জিত টাকার হিসাব চাইলে তা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হত, তাই নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড।”